Friday, July 3, 2009

আমার কবিতাসকল

অদ্যাবধি বড়ু চণ্ডিদাস
অচ্ছুত অনার্য এক পেয়েছে সোনার চুরি
এই নিয়ে আদিখ্যেতা দেশে
সন্নিকট কাকিল্ল্যায় শ্রীনাথ মুখোপাধ্যায়
অধিকারে ছিল, মহাশেষে।
শ্রীনিবাস আচার্যের বংশধর দৌহিত্রের
পুঁথি নিয়ে বসন্তরঞ্জন
বিবরিলা কংশরাজ বিরচিত চণ্ডিদাস
শ্রীসন্দর্ভ এ কৃষ্ণকীর্তন।

নিষেধ রয়েছে স্তনে নখাঘাত, আইহনে
ধ্বংস হবে মথুরানগর
দেবতা বিরুদ্ধ হলে বাসলী চরণ ভুলে
চণ্ডিদাস বনবিষ্ণুপুর।
রাধাবুলি আনঘাটে বর্ষায়, আনন্দে হাটে
কৃষ্ণচিত্ত বিবিধ প্রকার
মহাদানী যমুনায় গোপীজন মজে তায়
আলিঙ্গনে বড়ায়ি প্রখর।

কোড়ারাগ একতালী সরস বচন বুলি
বাঁশি নাম জপে রাধা রাধা
আধেক প্রণয় গুণে সখিগণ সুবচনে
আইহন-মায়ে করে বাধা।
কৃষ্ণবিনা যুগযুগ মদন পীড়িতা রাধা
উতলা, যমুনা নদীকূলে
বৃদ্ধার চাতুরি দেখে ছলায় নন্দন বিকে
কৃষ্ণবাঁশি চুরি কুম্ভজলে।

বিমনা তরলা মতি ক্রীড়াকর্মে সূক্ষ অতি
কৃষ্ণবিনা না বুঝে আকার
সময় করাত-কলে কানাই বিভ্রমে ফেলে
ধর্মাধর্ম, রাধা অভিসার।
মাতৃভ্রমে কংসরাজ বিপাকে পড়িলো তাজ
গুরুসঙ্গ বিলম্ব-তরাসে
বৃন্দাবনে ফল পাকে সখিগণ একে একে
পক্ষ রাখে গোপীজনা-পাশে।

এ পোড়া নিম্নের দেশ অভিমন্যু দৈন্যবেশ
মনে তবু বসন্তবিলাস
গদাধর নটরূপে কর্মফল, নতশিরে
অদ্যাবধি বড়ু চণ্ডিদাস।
কথার কৌশলে পার সপ্তকণ্ঠে পটূ আর
বৃন্দজন মথুরা ভুলে না
প্রতিশ্রুত আঙিনায় রাধা ফের ফিরে যায়
এ নগরে কানাই মিলে না।

কাব্য রচো বিষাদের বন
বিনা বাক্যে অশ্রু ছাড়ো ধরণীর ফুল ধরে
দ্বিধা হও মাতৃসমা, এত
ফুলের নামের বিশেষণে।
দেখি আজ ফুটে আছে সাহিত্যমালার ফুল
নর্থ ব্রুক হল রোডে
রূপ-রস বিনা আবেদনে।

আর তুমি গেয়ে যাচ্ছো বন্দনাগীতি, প্রাণের
লেক-পার্কে, ঘাসের উপর-
আমি বলি তরুর জীবন;
লিপিবদ্ধ হচ্ছে আজ নেহায়েত প্রয়োজনে
শুধাইলো গুরুভার, কী যে
কাব্য রচো বিষাদের বন!

শুয়ে মাটিতে ও ঘাসে আকাশের শিল্পরূপ
খুঁজো, কুয়াশার উপমায়
মরেছি সন্তাপে, কাব্যদায়ে
ফলত আমার গান বাজে, বিদায়ীর গলে
বিবিধ-বিজ্ঞানে, মাত্রাসহ
অতি পুরাতন শব্দ, লয়ে।

পর্যটক
মৃদুলা তরঙ্গ নয়; হেঁটে হেঁটে দীর্ঘপথ, বক্ররেখা বাতাসের
মজা নেয় সবুজ বৃক্ষেরা
যদিও বর্ধিত শোভা বনমধ্যে, সারি সারি গরান, শিমুল।

তরঙ্গই কামনা তোমার, স্থিতধির পর্যটক
দাঁড়িয়েছ নদীপাড়ে, সমুখেই জলনাচ, সুদূরের অবাধ সুনীল
তরঙ্গ স্বভাবজাত, জেগে ওঠে সখাভাব, তীরে-
একটি নর্তক শুধু উচ্চাশায় মীনের কেতনে।

তরঙ্গেরও থাকে কিছু ঈর্ষারীতি পাহাড়ে পাহাড়ে
নৈঃশব্দ্যের ঝিঁঝিঁট কীর্তনে
এ প্রকাশে মৃদুলা থাকে না, তাই বলি-
যেখানে জ্ঞানের উৎস, সমর্পিত, তুমি যাবে সেখানেই
শিক্ষাকাল ধরে ধরে সমুদ্রে... পাহাড়ে...

অধিক অহিংস-মাত্র জানে, এই কলা শ্রেষ্ঠ থাকে সংগীতেও
মগ্ন হলে টের পাবে তরঙ্গস্বভাব, ভেসে যায় সুরে সুরে
অবসন্ন দেহটির দ্বিধাপাঠ, কামনা যাতনা।

ব্লাকবোর্ড ও ডাস্টার
বিষাক্ত সাপের মতো আমার রক্তে তোমাকে পাবার বাসনা: সমর সেন
এ তোমার সহজাত প্রবণতা, ধরো...
যতোবার তাকিয়েছি ইশকুলে তোমার
দেখেছি শূন্যেই ব্লাকবোর্ড ও ডাস্টার
খেলায় সহাস্যে।

দীপায়নে সাপের ছাতার মধ্যে বসে থাকো রাণী সেজে
একান্তই অনুগত
ভয় নেই সাপের, তুমিই তার বিষ উৎপাদক।
প্রকৃত প্রেমিক দেখো ঘুরছে আজ লোকালয়ে কিন্তু
ব্যক্তিগত রচনাতে উজ্জ্বল থেকেছো আরো বেশি
শূন্যতাই শ্রেয় হলো এত হলুদের সমারোহে!

ফলে বিরচিত হই রচনাপ্রবণ, দেখি- দুরন্ত ইশকুল
ঘুমিয়ে পড়েছে পৃথিবীতে, অন্ধকারে...
অর খেলায়, ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায় ব্লাকবোর্ড ও ডাস্টার।

তারাজ্ঞান
সূত্রানুসন্ধান করি, আলো হয়ে ফুটেছে কুসুম
সে বহু দূরের দ্বীপে বাস।

তোমার বার্ধক্যজ্ঞানে, বলেছ এ বালখিল্যতা...
যে বৃক্ষে ফলেছে আম্র তাতে ফলে না কাঁঠাল কোনো
মাটির শ্মশ্রুষা নিয়ে জেগেছ পরার্থপর তুমি-
অতঃপর যাহা সত্য জ্বাজল্যমান ও দূরে
তাহা নেড়ে চেড়ে দেখা দুরূহ-বিদুর।

এও বলো, পৃথিবী সে কোনো রহস্যপ্রবণ গাছ
পাতা ঝরে পড়ে, জেগে ওঠে পুনরায়
পেচক, রাত্রির ডালে বসে থাকে বোবা
দীপ্যমান খোলা দুটি চোখ
অথচ তাতেই তুমি ভয়ার্ত থেকেছ, আর জেনেছ আসন্ন
বিপদের সম্ভাবনা কোনো।

আঁধারে তারার চিঠি বেশ স্পষ্ট হয়
কেননা সে নিজস্ব আলোর পূর্ণতায়...
এসে যায় চোখের শয্যায়।

স্বভাব
এ কবিতা সমধিক ব্যঞ্জনায় সঞ্চারিত আজ
তুমি রুখো তার গতিমুখ, তীরে, সকল জিজ্ঞাসা কাফেলার।

কী করে এ সম্ভব যে, ভুলে যাবে নদীর তরঙ্গ
তার আছে সুবিশাল ঢেউয়ের স্বভাব, কালাকাল, ওই যায় ভেসে ভেসে
তুমি স্তব্ধ, সুশীতল ঢেউ গুনে গুনে, বসেছ নদীর ধারে।

এ প্রভাব ফেরানো যাবে না
যেমন শিশুরা খায় দেখে দেখে, বড়দের খাদ্যতালিকায়
জগত মুখরা দেখ, কোলাহল তার প্রভাবের
ধানতে, বালুচর, গাছ, পাখালির উড়োদৃশ্য বাতাসের
সবকিছু আজ পৌঁছে দিচ্ছে বার্তা, দুয়ারে তোমার।

যন্ত্রণায় ছটফটে পাখি মগডালে বসে, প্রজ্ঞা করো বিবিধ মনীষা
নির্জন, একাকী বালচর পার হয়ে হেঁটে গেলে বহুদূর
তোমার চলায় প্রবাহিত নদী, জোয়ারেও ভুলে যায় জলের স্বভাব।

আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা
ফুলের মনীষা পাঠ করি। গন্ধ শুঁকি, শত-বিবরণী ফুলে ফুলে। ভাবি। পৃথিবীর তাবত সুন্দর প্রজ্ঞা-পারমিতা আসলে একটি ফুল। জনান্তিকে কিংবা নির্জনে ফোটা দুর্লভ অলকা। হ্যাঁ অলকা। একটি কবিতা স্মরণে এলো। জয় গোস্বামীর। হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে; অতল, তোমার সাক্ষাত পেয়ে চিনতে পারিনি বলে; হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে।

সম্ভবত অলকার গা থেকে গড়িয়ে পড়া জলে এক কবির হৃদয় ভেসে যায় কিংবা এখানে অলকা একটি নদী বা নদীফুল। আছে, অলকা একটি কবিফুলও। অলকা নন্দিতা। কবি-সমাবেশে নম-শূদ্র আমি যাকে দিদি বলে ডাকি। দীর্ঘদিন পর যার লেখা ঘর, ঘড়ি ও ঘুড়ি আমাকে চমকে দিয়েছে। এটা হয়। কবিতাফুল এ রকম চমকে দেয় মাঝে মাঝে।

আরো একটি ফুলের কবিতা মনে পড়ছে। ফুলকিশোর। সম্ভবত ওই কিশোর আগুনে পুড়ছে আর বঞ্চিত হচ্ছে। টোকন ঠাকুরের লেখা। টোকন-দা ওই কিশোর কী আপনার প্রিয়ফুল কেড়ে নিয়েছিল?

শেষমেশ আরো একটি ফুলের মনীষা। একশলায় একটি গোলাপ। লাল। তুলে এনে আমি যাকে ফেলে দিয়েছি মগড়ার জলে। সম্ভবত পারমিতা-রই প্ররোচনা। অর্থহীন অর্থজ্ঞান। আর বহুদিন পর স্পষ্ট কণ্ঠস্বর। তারই। কল্পনা করছি শাহবাগ, শিশুপার্ক, জাদুঘর। একটি নির্দিষ্ট শপিং প্লেস, কিছু ফাওয়ার শপ। ভেসে আসা কণ্ঠস্বরটি এরকম ছিল না কখনো।

বাথটাব
আগেও বলেছি ফল কীটদষ্ট, গাছপাকা তবু
কে শোনে কার কথা দলে, সবাই নিজের কথা বলে বলে
হয়রান, তুমি শুনলে, শুনেই পাকালে জট, পেটে–
চিনচিনে ব্যথা নিয়ে সোজা টয়লেটে।

শীতল জলের ভাণ্ড, বাথটাব, সুদৃশ্য দেয়াল
মত্ত হলে কর্ণযান, কুহকী ওঙ্কারে...
বলেছ লাগে না তার তুচ্ছকথা চলে অবিরাম
ফলে আরো কিশোর হয়েছ গূঢ় সমুদ্রের জলে।

জল অন্ধ জল বন্ধ জল সূক্ষ জীবনের মানে
মৃতসার, ফেনায় ফেনায় ডুবে লিখে দিলে শেষে তোলপাড়।

একদিকে জলপড়া টুপটাপ, শাওয়ারে বৃষ্টির তর্জন...
আরদিকে পিঁপড়ে-বহড়, ঠোঁটে বিষের কাহিনী, ক্রীড়াছল
এখন নিজেই তুচ্ছ, হচ্ছো তুমি, আড়ালে-আবডালে!

অবনির কড়চা
বুঝেছিস অবনি-
আমরা দিনগুনি
আগত সুখের, মচ্ছবে
বাতাসের ঝুনঝুনি।

কখনও উৎসবে, পার্টিতে
ক্ষুদে কথা, বিধিমালা
দিন-দিনেকের-
তড়িঘড়ি আপ্যায়ন, জনাবের
পিঠাপুলি, পাটিসাপ্টা দেখা হবে
বুকে হাপরের ঝড়ো-ঝাপ্টা।

কথা বলিস কাল, অফিসে
টেলিফোনে, নিত্য হাসফাঁস্
দিন গুনে গুনে রে অবনি
আমাদের ঝুনঝুনি।

কত আসছে, কত যাবে
চাচা দেখ আগে আপন পরাণ-
বুকে আঁটা খিল; পাথরের আজ
কথাগুলো কথা নয় মানুষের
ভোঁদড়ের ঢিল।

রীতি যদি সনাতন
পুনারোপি কাণ্ডজ্ঞান
লোকে-লোকেদের
কান নিয়ে গেছে চিলে
ও ভাই দেখেছিস অবনি
আমরা ধুঁকেছি আকালে।

দেশ নয় হারাবার, বিধি নয় জ্ঞান
কিলিয়েই না হয় পাকালে
কাঁঠাল-ঘণ্টিতে, আহারে অবনি
যথারীতি ঝুনঝুনি।

মহাযোগ
সেতুর প্রসঙ্গ এলো, তাই বলি কাঠ প্রয়োজন, বেঁধে দিতে দুইকূল
ব্যস্তজন, মাঝখানে নদী ভাটিদেশে, থমথম, মীনেদের ঘোরাফেরা
সংযোগে সিদ্ধার্থ মন, পিতৃব্যের প্ররোচনা, স্মরণের বনমালী-বনে।

নদী দিয়ে কত কী না আসে! নৌকাভর্তি স্নেহ-তারল্যের, বৈদেশমনীষা
কোটির গুটিকে থাকে সেতুমর্ম, সব ধর্ম বর্মে নয় অন্তরায়ও কিছু
ফলত যা কিছু অর্থ প্রজ্ঞাজ্ঞান, মূল্যবান, তাতে, ব্যস্ত আজ কাঠুরিয়া।

সেতু হবে, হাট হবে নদীকূলে আর কিছু ঘর নিতিদিন পসরায়
নীতিসহ গ্রামায়ন গ্রামে গ্রামে, দেশায়ন দেশে দেশে আশা-বসতির।

একদিন তাই হলো, হাট এলো, ঘরে-ঘর, লোকালয়, বন বেড়ে গেলো
মহাযোগে কায়াতরু, নগরে নতুন সখ্য, ভাব হলো মানুষে মানুষে
একদিন আরো কিযে হলো! হাতে-হাত, কাঠমুখি হলো আমাদের দিন।

ঘাটশিলা
এই যে হাতির পিঠে চড়ে স্বপ্নজাল, চলে যাচ্ছো দূরে, ময়ূরপুচ্ছের
ডানা আর সিংহ-কেশরের মুষ্টিবদ্ধ হাত, দূরাধিক স্বপ্নকুয়াশায়
আমি দেখি পাললিক ঘাটশিলা, উঁচূ‚ ওই পাহাড়ের জ্বলমান শিখা।

আজ এই চাঁদের ফসিল থেকে ভ্রমণ-নৈবেদ্য এনে ছড়িয়ে দিয়েছ
কী ছিল এমন ঘোর, রাত্রিজ্ঞান, আফ্রো-এশিয়ার হাওয়া, ধূপ-শীতলের
কলরবে মাতোয়ালা, সান্ধ্য-প্রদীপের আলো থেকে পরান্মুখ তন্ময়তা।

পাখ-পাখালির দেশ আমার, ভোরের নির্দেশিকা দেখ কোমলকুহেলী-
পলে পলে, ভাসমান চরাচরে মনসিজ মনীষার ছায়া স্তরে স্তরে।

আমার মুগ্ধতা আমি কী দিয়ে দেখাবো বলো, কী বিশাল নম্র হাকালুকি
কোড়াডাক সন্ধ্যাকালে, মধুর কোমল কলতানে উদ্বেলিত শতদেশ
কিছু ফটোগ্রাফ, ব্যস্ত পর্যটন, দাঁড়াও পথিক মন বসেছে ক্যামেরায়।

এডিডাস
এই শীতে লগবুক আর কিছু নবারুণ, কিশলয় মনে পড়ে গেলো
কফির উতলা ঘ্রাণ, সন্ধ্যার রেলিং ধরে ঔপনিবেশিক ছায়াতল
নাগিব, পামুক, সাত্রে, ঠাকুর, শিম্বোর্স্কা, জুল্লে, এডোনিস উত্তরীয় হাওয়া।

তোমাকে শুইয়ে রেখে মধুর আহ্বান এই বাংলায়, শিশিরে-ঘাসের
জড়িয়ে-ছড়িয়ে আছে কৈশোরক ভোরবেলা, স্মৃতি, একসেট এডিডাস
ছিল স্বপ্ন, হলে ভালো হতো, দৌড়বিদ হওয়া যেত কিনা! কিংবা না হলেও।

কত কী আসবে, যাবে, ভোরের বাগানে তিন পাঁপড়ির নাম না জানা ফুল
হয়ত দেবে না কেউ প্রতিক্ষিত কুয়াশায়, বটতলা, সুমেশ্বরী-তীরে।

এখন নগরে এই ভোরবেলা, বিধিলিপি, স্মৃতিভাঙা দুয়েকটি কাক
শুকনো রুটির ঘরে অচেনা মানুষ, ভেজাপথ, শব্জিহাট সকালের
নিতিদিন কোলাহলে একসেট এডিডাস! বিস্মৃতির! আমার কৈশোরে।

দেহঘড়ি
চৈত্রশেষে বিরল এ হাওয়া, ঝিরিঝিরি, দুলে ওঠছে পাতামন সাইবেরিয়
আমি পাখি হলে বেশ মজা হতো, ওড়ে ওড়ে নীলাকাশ, ঝড়ের সংগ্রহ
ডানাজুড়ে, কিন্তু আমি পাখি নই, ডানা থেকে খসে পড়ছে বিষনিম এক।

এই যদি ক্রীড়া হলো, দেখ গাছালির রীতি, দাহনেও নিরব দাঁড়িয়ে
তোমার দেহেও আছে এ রকম সহন-সহেলী, স্বপ্ন আসে স্বপ্ন যায়
তাকে বলি গুরুগৃহ, বলি দেহী, কই গো তোমার বিষখেলা আগুনের!

আমার কবিতা নয় যন্ত্রণার, না পারার, কথাকলি, হয়ে না ওঠার
বপণের রীতি দেখ, যাকে বলি চাষবাস সেখানেও পীড়ন-প্রণালী।

চৈতালীর তুমুল দাহন শেষে বলি আজ কায়াতরু অধিক নুয়েছে
দেহঘড়ি যে রকম হলে রতিকান্ত, টিকটিক শব্দভুলে নিদ্রা যায়
নিজের কথাই বলি, আমার আমিকে আমি কাউকে দেব না, তোমাকেও।

আজকের ফুল
গতকাল-ফুটে যাওয়া ফুলে
এবং ভবিষ্যতের ফুল বিষয়ক
আমার বিশেষ কোনো কৌতূহল নেই।

প্রতিদিন এই পৃথিবীতে
অজস্র ফুলের কলি ফুটে
গন্ধ-তারতম্যে কোনো কোনো ফুল
মার খেয়ে যায় আর কোনো কোনো ফুল
ওঠে আসে আরো বেশি আবেদনসহ
তোমার টবের শুশ্রূষায়।

গতকাল-ফুটা গন্ধফুলে
এবং ভবিষ্যতের গন্ধফুল নিয়ে
আমার বিশেষ কোনো কৌতূহল নেই
আমি শুধু দেখি, আজকের ফুলটিকে
ফুল বলে চেনা যায় কিনা!

পাতাবৃষ্টি
পাতাবৃষ্টি! বিষ্মিত হয়েছি মেদিনীর অভিধানে
আদ্যন্ত নখর বিষে আমার তুলনা, তবু অধর কাঁপিয়ে দিনমান
ঝুরঝুর পড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সম্ভাবনা সব।

মালা গেঁথে রাহুচণ্ডালের কাকস্যের প্রার্থনায় দাঁড়িয়েছি সূর্যজ্ঞানে...
নিজেরই অঙ্গের শোভা করে ডাকি দেবতা-চৈত্রের।

ভবিতব্য মেনে নেওয়া ভালো-
ঝরে যাওয়া পাতাকাহিনীর অভিধান কোনো সাজানো গাছের
ওসব বাদেও দেখ বেড়ে যায় ঈর্ষার প্রকার।

পাতাবৃষ্টি! আহা রে চৈত্রের বাড়াবাড়ি-
আমাকে শুইয়ে দেয় ভবিতব্যে, বাঁশবনে, এড়াতে পারি না।

প্যাগোডা
খোসা ছাড়ালেই মাংসঢেউ, তরতাজা নিবেদন
শামুক কৌশলে তুমি ডিঙোচ্ছো দেয়াল
কানকোয় ঝড়ের প্রমূর্ত অভিজ্ঞতা।

এ নদী ও নদী, ছোট জলা, তারপর...
প্যাগোডার স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল, শ্যাওলায়
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছ সংসার।

জল, ডাঙা আর এই ভেসে চলা অর্থ-অনর্থের
মেদিনীর সাপ্লিমেন্ট, ব্যাপ্ত গালিচায়।

ঘোর শীত, অঘ্রানের রোদেলা সকালে পাঠরত
অবুঝ আমার শিশু, পড়ছে-
খোসা ছাড়ালেই মাংসঢেউ, তরতাজা নিবেদন।

খোকা
তরুণ রাজনীতিক মাহি বি চৌধুরী-কে
পেছন পেছন আসে, গুনগুন গায়
বন্ধু ওগো... কী করে ভাবলে...
ভাবি, খোকা বুঝি পেছন পেছন চলে আসে কেঁদে
কোলে নিতে যাই-
গৃহিণীর ফেলে যাওয়া নেকলেস, বিবমিষা স্বর্ণের
খোকা কেঁদে যায়
পিছু পিছু প্রলোভন তাড়িয়ে বেড়ায়
নেকলেস, বিবমিষা স্বর্ণের...
আর মরিচিকা?
পেছন পেছন আসে, গুনগুন গায়
বন্ধু ওগো... কী করে ভাবলে...

বড় বড় লোকেদের স্ট্যাটাস সিম্বল
বাগানের ফুল-ফুটা দৃশ্য কিন্তু চমৎকার, তাতে
সৌন্দর্যচেতনা থাকে
যে গৃহে ফুলের উপস্থিতি, তাকে ঘিরে
আমাদের পবিত্রতা খেলা করে মনে।

এইকথা মনে হলো রামপুরা থেকে বাড্ডা হয়ে ফিরে আসবার পথে, রাস্তার দুপাশে কত নির্জন বাড়িতে ঊঁকি দিচ্ছে শত শত ফুল, জলসিক্ত, আহা! ফুলের বাহার। বিকেল-মনীষা তার ছড়িয়েছে প্রভা বিভাজিত ছাদে-বারান্দায়।

কালাকাল এইরূপে প্রজ্ঞাপিত। যোজন-বিজনে মগ্ন যারা, তারা আজ প্রভাময়।

ফুলের বশ্যতা মানি, একদিকে উপমিত কোমলতা আর দিকে পৃথিবীর তাবত বিপ্লব, রূঢ়-বাস্তবতা, সহিংসতায় তুমি নিরব-কঠিন দাঁড়িয়েছ। হরণের জাড্যতায় তুমুল কংগ্রেসী। রিক্সাঅলা বলে, বুঝলেন ভাই এইগুলা হইতাছে বড় বড় লোকেদের সৌন্দর্যচেতনা।

দেখলাম সত্যিই তো! সৌন্দর্যচেতনা...
বড় বড় লোকেদের স্ট্যাটাস সিম্বল।

কাটামুখ
কাটামুখ জ্বালাময়ী রক্তে ও লবণে।

এই তত্ত্বে মর্মাহত, ওষ্ঠাগত প্রাণ ফলে আজ অজ্ঞান হয়েছি
দীর্ঘ প্রণয়ের মোহে, মুখস্থ করেছি সব ধ্বনির জড়তা
তবু আজ, জানাবো না বিবরণ তাকে, অভিমুখ গন্তব্যের...
দিনে দিনে ক্ষারের শুশ্রূষা।

ফলে আজ খাদ্য গ্রহণের কালে, পোড়ামুখ, দৃশ্যাবলি জলে
জেগে ওঠে দ্বিধা ও সংশয়
কুরে খায় নির্ণিমেশ, ভিতরে-বাহিরে।

মহাবাতাসের বার্তা নিয়ে হেঁটে এসে বহুদূর...
সভ্যতার কাহিনী-ব্যঞ্জনা যত, গুপ্ত তড়পানোসহ ত্রস্ত
পিছলে পড়েছে সব এইখানে- ব্যাঘ্রে ও মহিষে
তবে কিনা ডেকেছে গভীরে অরণ্যানী, মোক্ষলাভে-
শস্য-দেবতার মায়া, বাড়ে দেশে দেশে
তবুও যাবে না বলা অমোঘ নিয়তি।

কাটামুখ জ্বালাময়ী রক্তে ও লবণে।

জমা হচ্ছে পাথরের বর
বন্ধু মুন্না, বন্ধুপত্নী রুম্পা ও তাদের কন্যা নাজাত-কে
সারাটি বিকেল জুড়ে এককোটি শাপলার উপস্থিতি
ভরকে দিলো সবুজের চিহ্নায়ন, অলিখিত আমার পয়ার
তোমাদের দুজনকে না বলেই আমি লিখলাম-
নির্জনে কোথাও থমকে থাকা
পুকুর-জলার মতো মজ্জাগত পরিচয়...
বুকে ধরে কখনো বলিনি-
...ফুলকে না বলা কথা।

জনহীন বেলাভূমি কখনোই নয়
তার আরো গভীরে আমার গৃহে
একটু একটু করে জমা হচ্ছে পাথরের বর
আর ছোট ছোট কয়েকটি পাহাড়ের আহামরি...

ধূসর-শীতল কিছু অগণন হাওয়া
গরম কফির ঝোল, হালকা চালে স্মরণ করালো-
গুরু মানে গাঢ় কিছু, আমার পীড়ার মধ্যে
বসবাস, কোনদিন অপাঠ্য করনি।

ডিমপারা কচ্ছপের গেরস্থালি
আমাকে লুকিয়ে ফেলা গেলে ভালো হতো
প্রকাশ্য দিবসে ঘুমে রেখে
স্বপ্নগুলো নিয়ে যাচ্ছে পিপঁড়ের দল
বিষের কারবারী।

হাতদুটো প্রার্থনায় মগ্ন নদীর প্রবহমান জলে
চারদিকব্যাপে মাকড়শার জাল,
কচুরির জটায় ডিমপারা কচ্ছপের গেরস্থালি
বাসা বদলের সম্ভাবনা ভেবে
তুলে আনি ডাঙায়
একি! এতো দেখি সেই নদীর সংগীত
পুরনো দিনের গান, আমাকে বাজায়।

আমাকে লুকিয়ে ফেলা গেলে ভালো হতো
প্রকাশ্য দিবসে ঘুমে রেখে
স্বপ্নগুলো নিয়ে যাচ্ছে পিপঁড়ের দল।

স্বাধিনতা
আলকথা বলি...
যে বার স্বাধিন হলো দেশ
বিজয় বিজয় বলে চিতকারে ফুতকারে-
মেতে ওঠি আমরা কজন, ভোরে; দেখ কী সুন্দর
সূর্য! লাল, আকাশে পাখির ঝাঁক, উড়ে যায় দূর, অজানায়
আমরা কী স্বাধিন তবে? যুদ্ধহীন, বলে কেউ, তুই চলে যা... যা...
হৃদয়ে তরুর দাহ, ক্ষতচিহ্ন, মেয়েটার প্রশ্ন
বাবা বলো, আমরা কী স্বাধিন তবে? যুদ্ধ কই?
মেয়েকে জড়িয়ে বলি ‘বুকে’
মেয়েটা বুঝে না।

শীত নামে ভিখিরিপাড়ায়
আশরাফ রোকন-কে
যদিও বসন্ত আজ প্রচারিত খুব বেশি, দিকে দিকে
পথে, লোকমুখে।
প্রয়োজনে, সুসময়ে বসন্তের উদ্ধৃতি বর্ণনা...
কিন্তু আজ শিশিরের কোমলতা শিহরিত করেছে তোমাকে।

দৃশ্যায়িত এইসব ভাঁটফুল ডোবার-
কিশোরী ধানের মাঠে গমের ব্যঞ্জনা, বেড়ে ওঠা
তথা এই শস্যের পালানে মুগ্ধবত অবনত
সর্ষের কোমল নৃত্যে-
দীর্ঘ দীর্ঘ মাঠ আর আলপথে ঘাসের
স্পর্শানুভূতি, তাড়িয়ে নিলো গ্রামে- অতীতমন্থনে।

ক্যালেন্ডারে দেখেছো শীতমাস এসে গেছে কাছাকাছি
পাতা-কুড়োনীর চোখে ধূসর সন্ধ্যার মুখচ্ছবি
ভীতগ্রস্ত, শীত নামে ভিখিরিপাড়ায়।

ধর্মফল
একটু একটু করে গিলে নিচ্ছো সর্ষের যন্ত্রণা।

তবু বলি, অমৃতের বিষে জরো জরো...
তোমাকে চাইতে আসিনি গোধূলির ফল
কীট ভেবে যদি কেউ মুদ্রা বিনিময়ে
নিয়ে যায় নিজের সন্তাপ
আহতের গীতমালা তাকেই পড়াবো জনান্তিকে।

ওই দেখ সর্ষে পিষে জবুথবু অঙ্কুরিত...
অব্যর্থ আঙুলে আজ মননের মহিমা ঢেলে ঢেলে-
স্নানমুখি, নত, কাঁপা সর্বো কনিষ্টের অকণ্ঠ যমুনা!

একটু একটু করে গিলে নিচ্ছো সর্ষের যন্ত্রণা
তোমাকেই কিনা প্রণমিত ভাবি আমি
উত্তপ্ত মোহনা,
করুণ দগ্ধতা; মাতৃ-রূপিনীর বেদনার ভাষা
ছোট ছোট সাজিয়ে রেখেছি পথে পথে
অনুভূতিহীন ধর্মফল!
তোমাকে চাইতে হয়- হাস্যকর!

আমার যে ধ্বনি ছিল
বিবরণে জেনেছি সামান্য, সামান্যই ছিল ঘটন-রটনা
আসবে আসবে বলে পায়ে ফুটে গেল কালোপিপঁড়ের বিষ
কাঁকড়ার উপমায় যে প্রকারে ব্যবচ্ছেদ হয়-
তোমাদের চাল-সুপারির কটকট ধ্বনি দাঁতের মর্মরে।

আমার যে ধ্বনি ছিল, নিচুস্বর, কাঁপা-ভীরু, উচাটন টানে
ক্রমে ক্ষীণ হয়ে এলো আরো, রাখো তবু আবেদন
বরাবর দাহিকাবিবর-
পুনরায় কে পালালো গ্রামদেশ ছেড়ে?
ভয় একটাই, সবুজের, মর্তপুরুষের; দিকে দিকে তারই জয়ধ্বনি।

তরল পচাইয়ে মগ্ন যারা
তারা জানে ইতিহাস, সংগীতের, গভীর স্বপ্নের।

দোলনায় দোলা কার্যরত কোমলতা একজন, যথারীতি সনাতন।

দীনশরত, আমাকে
এই মেঘ, রৌদ্র আর শরতের গল্পগুলি সময় সময়
ব্যস্ত রাখে দুরন্তের, শৈশবের, পোড়ায়, পোড়াতে চায়।

ল্যুভর মিউজিয়মে চিত্রশরতের বাঁকা হাসি, মুগ্ধবশ
একবার হাসে মোনালিসা
আর বীতনাথ, গ্রাম অডিটের মেয়ে নিশা।
পর্যটকের মোহ ভেঙে পেরে ওঠা কিশোরের বড়শির ছিপ
দণ্ড ভুলে দুরন্ত একটি মাছ... লাফালাফি...
নন্দনভাবনা, ঠোঁট কামড়ের মেঘ, বৃষ্টিতে কাঁশফুল
ধোঁয়াশায় দীনশরত, আমাকে ব্যস্ত রাখে, পোড়ায়, পোড়াতে চায়।

খরস্রোতা নদীটির শান্তজল, থমথম, নরম কাঁশফুল
মেঘের বৃষ্টিতে বানিশান্তা চিন্তালয়, ধোঁয়াশার আকিঞ্জন
জেগে ওঠছে কাঁশের মেয়ে রিবড্ সেনসেশন।

চেতনায় খুদকুটে ডানাখুটা শাদা কবুতর...
আর এক বীতনাত, পল্লিতে-বার্তায়, ধোঁয়াশায়
দীনশরত, আমাকে ব্যস্ত রাখে আরো, পোড়ায়, পোড়াতে চায়।

কোকিল
ডেকেছে বসন্তে, বনে বনে লোকালয়ে
ইথার কাঁপিয়ে-
বরাবরই সুমধুর গলা-বলে অধিক প্রশংস পাখিকুলে

আমি করি পার্থক্য রচনা
দেখাও তো দেখাও তো মিতায় বন্যায়
মিলে যায় কিনা-
শাস্ত্রীয় সংগীতে কিংবা তারানায়
সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলই শোনো শোনো পিতা

জনারণ্যে বিবৃত রয়েছে
পাখিরাই শ্রেষ্ঠ সুরকার সংগীতের...
আদিতেও দেখ
যখন ছিলে না তুমি বনবংশে
কোকিলের সংগীতেই মুগ্ধ ছিল বনসম্প্রদায়

উত্তরে-দক্ষিণে-পুবে, ঈশান-নৈঋৃতে
দশদিকব্যাপে তার সংগীত চারণ-
তোমার দস্যুতা দেখে ক্রমে সরে গেছে
প্রতীকবিশ্বের গূঢ় তেজস্বীমথুরা সংগীতের...

পরম্পরা
মনে হয় ধারণার মধ্যে কোন এক
সমুদ্র বিস্তার করেছিল,
আর আমি রচনা সম্ভারে আরো নত
হয়েছি কেবল কবিতা কবিতা বলে।

পিতামহ_ তার দীর্ঘছায়া সুতো টেনে
আনিয়াছিলেন পিতৃদেব,
তারা চাষ করেছিলো শস্যের মহিমা
মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

গেরস্থালি সূত্র ধরে একদিন সকলে
ঘরে ফিরে যায়
পথ ভুলে আমিও গিয়েছি কিন্তু
যে পথে যায় না আর কেউ।

পাতার জীবনী
মেঘেদের কলেজের পাশে বসে বলা-
নন্দনতত্ত্বের গল্পগুলি ম্লান হচ্ছে রোদে পুড়ে।

এখন কে তোমাকে বলেছে
সমুদ্রের মন্থরতা
তর্জন-গর্জন শেষে সমুদ্রও কোথাও কোথাও
বিরূপ চেয়েছে ওই পাহাড়ের মতো
দাঁড়িয়ে গুনতে নিস্তব্ধতা।

বরং এটুকু সার্থকতা শিখে এসো
পাতার জীবনী পড়ে
কী করে সবুজ থেকে থেকে
মলিনতাগুলি লিপিবদ্ধ হচ্ছে চৈত্রের দিবসে।

দারুণ অবহেলায় পড়ে আছে যে শুকনো পাতা
আমার জীবনী পাঠে এর চেয়ে কোনো-
সুন্দর উপমা নেই পৃথিবীতে।

সরল সমীকরণ
মানচিত্র দেখেই কাঁপছি, এত জটিল রেখার কারুকাজ
রেখার গভীরে আরো রেখা তবে কিনা
চোখ-বুঁজে ভেবেছি সহজ, ফলে তোমাকে লিখেছি
অজ্ঞানতা, অন্ধ বর্ণমালা।

যে ভেবেছে সরল সমীকরণ ভুল ব্যাকরণে
তাকে দিও পত্রালীর ছায়া, জমিনের মালিকানা আর
প্রবেশাধিকার নগরীর রূদ্ধদ্বারে
দেখো বুঝে নেবে ঠিকঠাক জল-শোষণের তাবত হিসাব।

কফিনে যায় না একা কোনো প্রাণ
সাথে থাকে জলে-ডুবে মরা অজস্র মৃত্যুর গান।

সবুজ মাঠের পাশে হেঁটে যেতে যেতে
যে বলেছে সুজলা সুফলা আজ হয়েছে বিলীন
সেই শুধু জানে সবুজের মানচিত্র
সহজ ছিল না কোনো কালে
যাও দেখে আসো গিয়ে শুক্রনদী পার হয়ে।

খননের প্রয়োজনে
জেগে আছি মৃতের চেতনে, রূঢ়দ্বার ভেঙে ভেঙে
জারুলের বন থেকে উঠে এসেছিলে
জবাববিহীন এক বিপরীত সভ্যতায়
আরাধ্য কংক্রিটে।

বালিয়াড়ি ভাঙা জাহাজের পিছে পিছে
চলে গেছো নাবিকের গৃহে
অচেনা ভোরের সমাধিতে, ফুলে ফুলে
তৃণদের উপমাবিহীন এই শহর একদিন
নেমে যাবে পুরোনোর মাঝে, কয়লার স্তুপে
ধাতুতে ধাতুতে।

দূরে কুয়াশার সেতু পার হয়ে তুমি চলে গেছ
সাতটি তারার চক্রবালে-
আমাকে দিয়েছো ফেলে জনমধ্যে খননের প্রয়োজনে
সভ্যতার কোণে।

মরেছো উদ্ভিদ-জালে
ছড়িয়ে রেখেছি গৃহে- সহজ কথাটি
এত টানা-ছেঁড়া তবু প্রাণ যায় ঘাস-ফড়িঙের
লেজে; ক্ষুদ্রকীটে ডুবে মরা।

তারার ব্যাপ্তিতে তুমি জেগে ওঠো ধাতু, স্বপ্নপরী
ফুল বেঁচে যাক এইসব কোমলতা
ভোরের রঙিন সূর্যোদয়ে আর পাখিদের কণ্ঠে
শোভা পায় নিরস্ত্র ললিতকলা; বাদ্যের মন্ত্রণা।

মরেছো উদ্ভিদ-জালে, গূঢ়তত্ত্বে; দৈব প্ররোচনা বাজে কানে
দৈবের আগুনে নয় সহজিয়া কলা
তাপিত জলের স্তুতি, পতঙ্গের গান
খেলা শেষে পতঙ্গপ্রবণ শিশু অবাক সকালে
ব্যবহৃত হও মরাকাঠ, কয়লার ইতিহাসে।

ফুলের বাণিজ্য
ফুলের প্রত্যক্ষ চাষে শিশুবোধ লুপ্ত হয়ে যায়।

শিশুদের শিক্ষাদানে ব্যবহৃত প্রথম বর্ণই চিত্রকলা
ফুল ধরে ধরে তুমি শিশুদের শেখাচ্ছো ফুলের
গন্ধ বিবরণ;
তবুও শিক্ষার প্রশ্নে
যে সব চিত্রের ব্যাখ্যা করি আজ জড়তাপ্রসূত
সে তো অবয়বহীন শূন্যকায় দ্বিধা।

ক্যানভাসে ঝরাফুলে বেদনা থাকে না
প্রজাপতি বসে না কখনো ক্যানভাসে আঁকা ফুলে
এইভেবে ফুলচাষ করে বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখে কেহ কেহ
ফলে প্রতিদিন পথে নেমে দেখি কত মৃতফুল!
এইসব প্রত্যক্ষ মৃত্যুতে বিরহিত থাকে মন।

একথা জেনেও তবু ফুলের বাণিজ্যে কিছুলোক
সম্ভাবনা দেখে প্রতিদিন।

জলহীন সমুদ্র সমুদ্র নয়
প্রকৃত প্রস্তাবে ডাক কেউ শোনে? তবে কেনো-
বলে থাকো ডাকের মহিমা...
যদি সে ফিরে না চায় সাধনার ফল
বোবা-কালা ধুলায় লুটায় অনুতাপে
অনুযোগে তবু বলে রাখো তত্ত্বগূঢ় আলোচনা
সম্মুখ ভাষণে।

সমুদ্রে সকল ডাক অনর্থ-চিৎকার, এইকথা
জেনেও বলেছ তুমি সমুদ্র-কে মানো
উপেক্ষার ভাষা বুকে নিয়ে
সরল সমুদ্র আজ হয়েছে বিশাল।

গোলাপ ফুলের কথা ভেবে দেখো, সুবাসিত ঘ্রাণ আর
কোমলতা না হলে কী, দিতে তুমি তোমার প্রণয়!

যতই সমুদ্র বলো জলহীন সমুদ্র সমুদ্র নয়
খরা-পোড়া নিম্নাঞ্চল শুধু
আকাশের পতিত বৃষ্টির জল ডেকেছে নিরবে।

গোপনে জ্যোৎস্না বিক্রি করি
কোনো এক অন্ধকার বিষয়ক কথা চলছিলো
পাশে, চুপি চুপি একজন অহেতুক দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আমরা আলোতে ভয় পাই- এই বলে...
কোথা হতে তবে ঢুকে পড়েছে রে আলো
চারিদিকে এত পরিবেশ- সামাজিক
এইসব চোখে চোখে রেখে তুমি বলো
এতগুলা পশ্চাদের গন্ধ বড় বিশ্রি লাগে আজ।

দেশে খালি চুরি!
পুলিশের ভয়ে-
গোপনে জ্যোৎস্না বিক্রি করি।

ঈর্ষা
ঈর্ষার নিচেই দেখো লুকিয়ে রয়েছে লজ্জা
হীনমন্যতা, সম্ভ্রম।

নীতিশাস্ত্র গীতিশাস্ত্র পাঠ হয়ে গেলে
একদিন ফুলের সৌন্দর্যে তবু ঈর্ষান্বিত হলে
বৃরে শরীর থেকে এরকম প্রস্ফূটিত হয়
যা কিনা তোমার পক্ষে সম্ভব ছিল না কোনদিন।

পাড়ায় পাড়ায় আজ প্রচারিত হচ্ছে
যে গাছে অধিক পাতা ও গোছানো থাকে
তা দেখেও ঈর্ষান্বিত হয়ে যায় পথের মানুষ।

মোমাখ্যান
আগুনের কাছাকাছি মোম কিন্তু আপনাতেই গলমান
পুড়ে পুড়ে নিজে প্রসারিত করেছে আলোক বিভা
দেহখানি পুড়েছে উত্তাপে,
যদিও প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশিত ফলাফল আলোক প্রদান
আর তাতে পোড়ালো সে আপন ভুবন।

জ্বলো কিংবা জ্বালো উজ্জ্বল আলোর সম্ভাবনা ভেবে
যেরূপ দিয়েছ ভরে সুতোখানি মোমের গভীরে
সেমতো আলোর নিশ্চয়তা পাবে প্রতারণাহীন
বরং সলতে ব্যবহারে আছে যত জটিলতা
তার ফলে চেনা যায় ভুল কারিগর।

আগুনের কাছাকাছি মোম শুধু গলমান নিজেকে পুড়িয়ে
কারুময় আলোর সাক্ষর বলে দেবে
মোমের শরীর ভেদে-
কতটা আলোর প্রকাশক তুমি সুতো ব্যবহারে।

পরিবেশ পরিচিতি ছায়া
তন্ময় হয়েছ পথে, এতো আলো! উপচে পড়েছে
সূর্যের প্রসার।

আলোর সম্প্রসারণে মুগ্ধতাই বাড়ে গৃহে গৃহে
তুমি কিনা ছায়া দেখে দূরত্ব মাপছো
মানুষ ও ছায়া আর যত আছে সম্পর্কের সেতু
তারও চেয়ে প্রমাণিত থাকে সব বৈপরিত্ব,
ভেতরে তোমার।

এই বাক্যে, জটিলতা তোমারই বেড়েছে
কেননা দেখো যে, আলো কিংবা ছায়া আজ
প্রয়োজনে ব্যবহৃত তোমারই গভীরে।

যে আলোর বৈপরীত্য আজ, দেখছো দিনে ও রাতে
সে কেবল চোখের সাম্রাজ্যে প্রকাশিত
ভিন্ন ভিন্ন কারুকাজে।

বোবাফুল
কণ্ঠ নেই আগুনের গৃহে স্তব্ধতা-গমন আর
এমন আঁধার হয়ে নক্ষত্রকে করেছ সন্দেহী,
লুকিয়ে রয়েছ তুমি; ছোট ছোট তারাপথ থেকে
তোমার প্রত্যাগমন, সেকথা ভেবেই একদিন
ভাবতে বসেছি শুধু প্রকাশ্যে রেখেছ চোখ আর
বাদবাকি অপ্রকাশ্যে রেখে দিলে বিবৃতিবিহীন।

সামান্য বৃত্তান্ত ছাড়া তোমার কি নাম? সে কথাও
আড়ালে আড়ালে আজ গুঞ্জরিত হয়, শিশুঘুম
নামে যদি চিনে ফেলি তবে ভুল চেনা হবে, যদি
না জানি তোমার সেই বালিকা বয়স? ঋতুবতী?
যেভাবে কেটেছে দিন পাগলের মত নেচে নেচে
সেই রহস্যের দ্বার উন্মোচিত করে, আমি আজ
গভীর আঁধার রাতে, দেখে ফেলি ঠাহরবিদ্যায়
ফুটে আছো বোকাসোকা, তুমি এক পর্বত-চূড়োয়।

দি পোয়েট্রি: সার্কুলেশন অব রেইন
সশব্দ বৃষ্টির প্রশ্নে তোমার ড্রইংরুম বেশ মুখরিত
সাউন্ড সিস্টেমে।

বুলেটপ্রুফ বাসায় বসে বসে দেখছো চ্যানেলে
অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে, বাইরে গাড়ির শব্দ
পরিস্কার বৃষ্টির বর্ষণে সিক্ত তোমার শরীর
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে যেরূপ আন্দোলিত পাতার শরীর।

ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম ভেদ করে
গ্রামে গ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে অফুরাণ- তার ধারাপাত
রেইন সার্কুলেশন, আমি শিখি ছাগল তাড়ানো এক
কিশোরীর থেকে...
তার চোখে আন্দোলিত সহস্র বৃষ্টির প্রকাশনা।

রোমান্টিক-চর্চা কেন্দ্র
বৃষ্টি বিষয়ক এত এত উত্তেজনা দেশে দেশে
আর বাঙলা প্লাটফর্ম খালি বৃষ্টি ভয়ে-
এই কর্মশালা শেষে কজন সফল অভিজ্ঞানে?

নিশ্চিত রাত্রিকে তারা ছড়িয়ে বসেছে অন্ধকারে
পাতিলের তলানিতে আলোর পসরা
কিন্তু এই শত শত তারার বাজার
দিকে দিকে স্টেশন মাস্টার...
প্লাটফর্ম ছেড়ে বহুদূর গেছে ট্রেন যাত্রীসহ
এখনো হেডলাইটগুলো জ্বলে, আহা!
চারিদিকে কত শত বর্ষারূপ দোহারে রচনা।

কুপিবাতিসহ বৃদ্ধা, অপেক্ষমাণ পুরনো গৃহ
ফিরে আসা সন্তানের চোখে প্রতিক্ষার শিহরণ
একদিন এই বঙ্গদেশে বৃষ্টি হবে
রোমান্টিক-চর্চা কেন্দ্রগুলা ভিজে যাবে।

মহাদেশ
প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত এক মানুষের পাশে বসে থেকে
ক্রমাগত খেয়ে যাচ্ছি আমি, মৃত মানুষের মাংস...
ভীষণ ঘৃণার মতো আর এক টেনারির বর্জ্য
আমাকে ভাসিয়ে নিচ্ছে সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে
গভীরে কোথাও এক পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
বহুদূর সভ্যতার পদধ্বনি শুনতে শুনতে
সভ্যতার এক কোণে রক্তের কণার মতো একা
বিলবোর্ডে লেখা শব্দগুলো সহায়-সম্বলহীন
তড়পাচ্ছে তড়পাচ্ছে কী যে দোটানায় ঝুলে আছে
আমার মাংসের টুকরো, রক্তচক্ষু, পাখির কণ্ঠও...
ভেদ করে এদিকে আসে না রোদ, এমন নির্জন!
একটি তারাও আর চিহ্নায়িত হচ্ছে না আকাশে
কে আমাকে চালিত করেছে তবে বিষের ডানায়?

তবুও চলেছ তপ্তলাভাপথে
সহস্র বর্ষের কথা আর পূর্ব-পুরুষের শ্রমনিষ্ঠাসহ
বেরিয়ে এসেছো ভোরে, কুয়াশাসকালে
অচেনা বাতাস যার কোনো রঙ নেই
অনুভূতি ছাড়া।

তুমি সে গুপ্তঘাতক সবুজ সূর্যের হত্যাকারী
পরগাছা হয়ে আজ মেরে যাচ্ছো
কচি কচি ডানা অন্ধরাত্রে।

যতোবার শুনেছি কাহিনী, উপকথা-
মুগ্ধ শ্রবণের গ্লানি, দিনে দিনে ইন্দ্রিয় প্রসার
দৃষ্টিকাতরতা ফলে আজ অন্ধ তুমি
তবুও চলেছ তপ্তলাভাপথে।
পায়ে চলা পথে শুধু, চলে যাচ্ছে ঘাসের শ্মশ্রূষা
মরেছে উদ্ভিদ, বিশেষত স্বচ্ছ আর কিছুই হচ্ছে না জানা।

গূঢ় এক মনুমেন্ট
পুনরায় মৃদু বর্ষারূপ চেতনবিজ্ঞানে, আষাঢ়ষ্য অমোঘ দিবসে
গূঢ় এক মনুমেন্ট তার রূঢ় শিরদাঁড়া, উঁচু ওই আকাশের বৃষ্টি ডেকে আনে
শৈশবের স্কুলঘরে ভীতি, ভিজে চরাচর, অন্ধ প্রতিবেশ
কোনোদিন মনেও ধরেনি মেঘ, আহা বর্ষা! বাঁদাড়ে-টিলায় অবিরাম।

ভিজছে পতাকা একা, মননের বর্ষা নেই প্রতীতিরা আছে
গৃহমুখি কয়টি কিশোরী ছাত্রী উচাটন মফস্বলে, তারা
আগুনের বেসাতিতে বর্ষারূপ, বুকে ধরে বাংলাদেশ ভিজিয়ে চলেছে।

এম কে সি এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় আর কি কি যেন শিক্ষালয়
বর্ষার ক্রীড়ায়, আজও, কারা কারা আসে ভিজেদের দলে, নতুন শিক্ষিকা
গূঢ় কালা-বরিষায়, মানকচু’র পাতা আছে, আয়
মাথা খেয়ে ডাকছি কালা রে...
ভীতিটিতি ভেঙে আয়, দেবো তোকে দেহের গরম।

দৃষ্টিসীমা ভেদ করে, গোপাট উজার করে বর্ষাধারা অবিরাম, পাশে
শস্যমাঠে, নুয়ে পড়েছে কাকতাড়ুয়া–
কলাগাছের ভেলায় চঞ্চলতা, ডুবো-সাঁতারের ব্যাকুলতা, কালাজ্বর
কেবল ভাণুদা বসে একা, দূরদর্শি, দূরকল্পে ভীতিহীন।

গূঢ় এক মনুমেন্ট তার রূঢ় শিরদাঁড়া, উঁচু ওই আকাশের বৃষ্টি ডেকে আনে
আহা বর্ষা! কোনোদিন মনেও ধরেনি মেঘ, বাঁদাড়ে-টিলায় অবিরাম।

সারাবেলা অগ্নিত আলেয়া
লাভালাভ বিষয়ের, কেনোদিন হিসেব করনি তালগোল
আপ্তবাক্য খ্যাদ্যাভাব, মূর্তমান দেশে–
আর তুমি ব্যাপ্ত হলে সূ টান, তার নিচে আর্ত-পরিত্রাণ
ব্যাকুলের, মরিয়া হয়েছ।
কিন্তু হায়! এরূপ বলনি মূলভাব, খাদ্যসার, এই হলো
আত্মভোলা মানুষের নিধি চিরকাল।

পরিস্কার ধারণা নিয়েও স্থিতধির, প্রজ্ঞারূপ, জবুথবু
মাটিতে করিনি চাষ হৃদয়ের, দূরে রেখে প্রাণমন চিলের ব্যাখ্যায়।

লাভ নেই, তৃষ্ণাকুল, খেলা বেড়ে যায় রোপণের অন্বেষায়
মনে পড়ে তার হাত, কিছু না বলেও সুষমায়...
একদিন ধীর, জিজ্ঞাসায়, ঢুকে গিয়েছিল গভীরে মাটির
তাতে ফল, ফুল, তরুলতা সবই ছিল ঝাঁকেঝাঁকে, কল্পময়।

মিছেমিছি ভ্রান্তিরূপ, কি হেতু চিত্রের? বারান্দায় প্রজ্ঞারত
বলো আর কাকে ছেড়ে ভাবো তুমি সারাবেলা অগ্নিত আলেয়া?
দেখ সবুজের বন। তৃণমূল। গরুগুলি। ঘাসগুলি। ওসব থোড়াই।

মানচিত্র
কতিপয় সুরের সন্ত্রাস ছোট্ট চালাঘরে, ঝুলন্ত বাঁদাড়ে
ভাঙাচুরা, তবু কতগুলা তারা পপাত করে।
সসতর্ক মনচোরা! ঢুকলো কী করে? কোন ফাঁকে?

গুরুর চরণে পড়ি জিজ্ঞাসিব আজ, এইরূপ ক্রীড়া হয়?
আমি ভাবি কাণ্ড-মূল! এক, আপনি দেখি শতেক।

অদৃশ্যে আছেন? সেই ভালো, বর্ণজ্ঞান স্মরণের...
সে এক রাত্রির কথা, পিছু ছার্বেন না, ছেড়ে দিলে মরে যাবো।

একটি কথার ফুল মনে ধরে মেঘ! লীলাময়
ক্ষাণিক বিরতি, ফের বাজে, এনে দেন এনে দেন দেখি তারে
কালা কাজলের রাগ, তাজা-সিক্ত ফুল তার কায়া-প্রতিমায়।

অসময়ে সেই মেঘ! কী জানি কী হয়, বুক ধুকপুক করে
মানচিত্র থেকে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে, গুরু, আর কতদূরে?

No comments:

Post a Comment