Friday, July 3, 2009

নকশিকাঁথায় কয়েকটি দৃশ্যসুতো / দ্বিতীয় পর্ব

পিকাপ
পণ্যের বিস্তারে নয় শস্যভর্তি পিকাপ ছুটেছে ভোরে, পথরাজ, ক্ষিপ্রগতি তার
চাল-গম দুধ আর পেছনেই সেঁটে দেয়া বিজ্ঞাপন মঙ্গায়তাড়িত
চৈত্রফের, বার্তাগৃহে কাঁপে মহাদেশ, পাঠিয়েছ জরা-কাহিনীর বিবিধ বর্ণনা।

জীর্ণ-ভুক্তা দিনাতিগ, অনলের দাহপাঠ, এদিকে আমার চিন্তা জুড়ে জলপাই
কামরাঙা, শিশুমনি, মেহগিনি, কলাপাতা আর তার গুণগান, সবুজ মার্জার
ফেলে আসা গ্রামদেশে খরারোষ, গর্জে ওঠা বাংলাদেশ, সুদূর অতীত বঙ্গলীর!

কডুরা
অশ্লিল-অশ্রাব্যহেতু উড়িয়ে দিয়েছ কথা, গুবরে পোকার বনে গুপ্ত সম্ভাবনা
তবু বলি, মেনে নাও ফুলের উপমা, জন্মকাল, সন্ধ্যাকালে কূটাভাস কডুরার
দেশে দেশে রয়ে গেছে বিবিধ ব্যঞ্জনা যত বুনোদের আচার-সংস্কার।

নদীর পাশেই ছিল বনছায়া, নাঙ্গাপাড়, প্রকৃতির নিরব বাগান ফুলেদের
জলেভাসা, ফুল নেড়ে দৃশ্যভাঙা, হেলায় ফেলায় তারে বেঁধে রাখি মুহূর্ত-মরিচা
ব্যবহারবিধি আর চিত্রকল্পরূপ, অনায়াস, ক্যামেরায় পরিচর্যা গোধূলির চরাচর।

মরিচ
দেখ কাণ্ড, সতর্ক থাকে না! ছায়া-সুনিবিড় বৃঘেরা মফস্বলে, মগ্নতার দলে
ভ্রমণে চলেছ? দূরদেশে কার্য-দিবসের বিরহে কাতর, বনে, পর্যটন-গৃহে
কোত্থেকে ঝালপোকা এসে জরদ্গব, ঢুকে গেল এক্কেবারে গর্ভে, জ্বালাপালা।

গড়াতে গড়াতে তুমি মরিচের প্রসঙ্গে বলেছ থোকা থোকা, কাঁচা ছিল নাকি পাকা?
লঙ্কান পোয়েট্রি, বেশ! সো নাইস! এদিকে গর্গরে পড়া পানি নিয়ে কত হাসাহাসি
নিরুপায়! চোখ শিশু, কেঁদে ফেলে, মরিচের নানাবিধ ব্যবহার বিরূপ বিন্যাসে।

নাবিক
ভাবনান্তর হয়েছে বিচ্যুতি ঘটেছে, বলে একজন ক্ষীণস্বর, জলের প্রজ্ঞায়
সমুদ্র-নাবিক আহা! এই হলো ভবিতব্য জলে, অন্ধ-কুঠুরির মোহে ডুবোমন
চন্দ্রিমাধাতুতে গড়া বাতিঘর দেখে দেখে দিয়েছ সাঁতার নিরুদ্দেশ।

হিমের রাজন্যজালে চোখের বয়েসিদাগ কালো-রাত্রিজ্ঞান-ডুবো সমুদ্রের দেশে
নীলছিটা আফ্রোদিতি, তার ডাক, পেরিপ্লাস, ঝোলায় ব্যাপৃত গভীরতা কাহিনীর
কত অজানার জলে পরিণতি, আত্মাহুতি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্পে সমুদ্র-বিহার।

বর্ষাতি
রবিবাবুর কাব্যের ঘন চিত্রায়ন, দেখি সজীবতাসহ বর্ষারূপ ক্ষেতে-মাঠে–
বিস্তারিত জানিয়েছ বর্ষাকাল, আধডুবা কাশবন ফুটে আছে তোমার কাঁথায়
বারান্দায় গভীর বৃষ্টিতে ভিজে, বর্ষা একদিন জবুথবু, গুরুতর সমাহিত।

আর দেখ, চিত্রের বর্ষাতি ফেলে তুলে নেয়া ব্রহ্মজ্ঞান বরিষ-অধ্যায় আষাঢ়ের
কয়েকটি কিশোরী গ্রামের মেয়ে, বাঁশবন, সরুপথ বেয়ে আলে, ক্ষেতের জলায়
বর্ষার প্রসঙ্গে হাসাহাসি করে, মোপাসায়, তারা ফিরে যাচ্ছে ঘরে তুমুল বর্ষায়।

টোটকা
রাতে, টোটকায় ক্ষিপ্র ষাঁড়, চোখা শিং, বড় বড় চোখ ফুঁসছে, ফুঁসছে অহর্নিশ
আঁতকে ওঠেছি! হীনাচার, ক্যানিব্যাল মাংস উৎসবের ভিড়ে, উৎকণ্ঠায়–
সারারাত কুপি-আলো, মন্ত্র আর শব্দবন্ধে ঘিরে ধরা গেরস্তের ষাঁড়ের অর্চনা।

চোখা শিং পেট চিরে দেবে, ফাঁকে, বিপরীতে আসা ষাঁড়ে লেবু আর মটকা-পীড়ন
তার শিংও ভেঙে দেবে এরূপ বিশ্বাসে, দড়িকাটাদল, ত্রস্ত, ফিরে গেছে টোটকায়
দিবসে খেলার ব্যাপ্তি ষাঁড়ে ষাঁড়ে, গ্রামে গ্রামে, মানুষে মানুষে তারা টোটকা-বরাতে।

আড়ং
বিজয়ী ষাঁড়ের গলে, পরিয়েছ টাকাভর্তি কাপড়ের মালা, গ্রামদেশ ঘুরে ঘুরে
ছুটে আসা বাদ্যদল দিয়েছে মন্ত্রনা সংগীতের, যন্ত্রগানে বিজয়ের প্রকাশনা
লড়াইয়ে মগ্ন মন, কিছুই দেখেনি এর বেশি লোকারণ্য জনতায়।

পরাজিত-ষাঁড়ে ক্ষতলিপি ব্যর্থদের, বিষাদ-পেষণ হেসে ক্রুররূপ সমাপনী
তারা, ফিরে গেছে দূর কুয়াশা-কুটিরে; ভাঙা মণ্ডপ, গোশালা, খণ্ডকাচ-
অর্চনাদি ফেলে রেখে দাহিকায়, গৃহে গৃহে ছুরির তীব্রতা স্বপ্নজমা আগামীর।

কোদালি
বিলের জলায় মই-কোদালির চিত্রায়ন, দেখ নিদারুণ, ফসলের সংগ্রাম
দ্বন্দ বাড়ে হিরালী ও ডুবুরির, জল-মাটি আকাশের বিদ্যুত-হুংকারে, বিধাতায়
দূরে ওই খড়োবাড়ি করেছে প্রার্থনা বিচালির ঝড়-বন্যা ক্ষতআর্তিসহ ত্রস্ত চলন্তিকা।

সহস্র সহস্র কৃষকের জাড্য চোখ আর স্বপ্নায়নে, ফুঁসছে ফানুশ নিখিলের
ঈশ্বরের ক্ষিপ্রতা হিরালী মন্ত্রে, কাঁপছে প্রবাহ বাতাসের গোশালায়
আগুনের আঁচে প্রকম্পিত চাষাদল বরফের কুচিগুলা জোঁক হয়ে নেমে যাবে জলে।

কুটুম
ঝাঁকঝাঁক কুটুম পাখির ছায়া ধুতুরা-বাগানে, পাশে, মধ্যমাঠে, বিরাণ প্রান্তরে
সেবার এপ্রিলে তারা অপরিণামদর্শি ক’জন, মগ্ন, বিপণ্নের পরিণাম-কল্পে
দুপুরের ব্যস্ততায় উদগত বনমালা, কথাচিত্র, মাঠে মাঠে নকশিকাঁথার রূপরেখা।

মেনে নিচ্ছি খননের গল্প আরোপিত, রাখো না সময়জ্ঞান, ভাসমান বপনের
প্রখর রোদ্দুরে পুড়ে আল বেয়ে চলে যাচ্ছে বনরুই, সে কি মাছ কোনো?
ঔষধি বিষয় বলে ছায়া কাটে একজন, আলে হাঁটে, দাঁত মাজে ভাঙা-নিমডালে।

গন্দম
উড়োজাহাজের শব্দ শুনে ঊর্ধ্বমুখ, বেরিয়েছ ঘর ছেড়ে, কাকরুল, ডেওফল
শিমলতা বনঘেরা স্কুলঘরে কোলাহল শিশুদের, শকুনের অভিজ্ঞতাসহ
মুরগীর বাচ্চাগুলা কান্নারত উঠোনের কোণে, পিতৃহীন মাতৃহীন কচিদল।

বিদগ্ধ-পীড়িত দেশ! জ্বালাময়, খাঁচাবন্দি মানুষ চলেছে কিছু বিদেশ-প্রণয়ে
বন্দরে বন্দরে পণ্য, আত্মপর ত্রস্ত মানুষের ফেরা, দৃশ্যভুক চিনতে পেরেছ–
কয়টি অচল মুদ্রা, সিলগালা, মুখোশ ও উজ্জ্বল ডাকটিকিট বৈদেশিক খামে।

মৌমাছি
আগুনের দাহ আর উড়ন্ত মৌমাছিদল, গজকুম্ভ, যুবার প্রজেক্ট নিয়ে ভাবি–
তৃতীয় বিশ্বের এক বিরাট বিষ্ময়! গাছে গাছে, মাছিদের বিশ্বায়ন সবিস্তারে
বনে বনে ঘুরে ফিরে বলেছে সে অজস্র কুঠুরি, মধুসুধা, দেখ প্রবাহ-প্রণালী।

আধমণ তরল ঔষধি, ঝুলে আছে নিম্নগামী, সহস্রের সম্ভাবনা ডালে ডালে
রাণী উড়ে গেলে তারা থাকে না চাকের মোহে ফেলে রেখে ফুলের তরল ফল সুধা
দিনমান বনচর, তাড়িয়ে নিয়েছে তাকে জলায়-জংলায়, শেরপুর, মুক্তাগাছায়।

বড়শি
ক্ষুধার্ত বোয়াল এক, দীর্ঘশির, ঘোরাফেরা করে মস্ত পুকুরের জলে
ব্যস্ত-শিকারির গতি জলের আবেগে স্থির, ছিপের নতয় দৃশ্যরূপ প্রেমিকের...
বড়শিতে টোপ দেয়া পুঁটিমাছ টুপ করে গিলে নেয় গভীরে জলের, তলদেশে।

অধরা-মাধুরী বিষাদিত কাব্যগ্রন্থ পড়ে আছে ধূসরিত, বৈকালিক প্রতিবেশে
ক্রমশ সুতোর টানে আলোড়ন, জলের দোমালি ভেদ করে সন্ধ্যাধ্বনি
মৎস্যবৎ কুশলতা, প্রসারিত বোয়ালের বুক চিরে, ঘরে ঘরে, পল্লিতে-সন্ধ্যায়।

কালাই
সরকারি রাস্তার দুপাশে শস্যায়ন, দীর্ঘমাঠ, সভ্যতার মটর-কালাই চাষ
বহুদিন পর দগ্ধপ্রাণ এইসব, সজীবতা সঞ্চারণ, বিরহিত বৈদেশের, ভ্রমণের
নালিঘাস, পাতাপুতা, খড়োঘর দুপায়ে মাড়িয়ে আমি শহরে এলাম।

মাইল মাইল-ব্যাপে সবুজের চিত্রায়নে শোভিত তোমার দেয়ালিকা
তৃতীয়বিশ্বের সৌরশক্তি শুষে নিচ্ছে জল, হিতৈষণা, নিবেদিত তোমার অন্তরা
ফলে দেয়ালিকা থেকে বর্ণরৌদ্র ছিটকে পড়ছে দিগ্বিদিকে, জ্যোতির্ময়।

বিভূতি
দিন যাচ্ছে অহেতুক, বিস্মৃতি বলতে শুধু দুটি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া...
পুকুরের পাড়ে চিত্রপট স্বদেশের, প্রীতিরূপ, পাশাপাশি বেড়ে ওঠা দুটি গাছ
এরকম বহু বসন্তদিনের স্তুতি হয়তবা স্মরণে দিয়েছে টান মননের।

মৃত্যুচিন্তা সহসাই কাঁপিয়েছে, যদিও বলেছি কাবারাবা হাবাদের...
এখন সময় ডিজিটাল গ্লোবাল মিডিয়া, বর্ণায়ন, যৌথ ভাবনার–
দিন যাচ্ছে অহেতুক, বিস্মৃতি বলতে শুধু দুটি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া গাছ।

কদম
নাককাটা, কদমের গন্ধ শুঁকে কী লাভ কী লাভ আজ বলেছ প্রকাশ্যে
ভয় নেই, জনান্তিকে এই নিয়ে আদিখ্যেতা, গুঞ্জরণ, মানুষে মানুষে...
কদমে রেখেছ চোখ, ভীষণ কোমল! ধায়, কিশোরীর আত্মসমাপন বৃষ্টিজলে।

এষণা কুসুম তুমি বীতস্পৃহ, অহল্যার, ডুবে গেছ কোন এক বিস্মৃত-গহ্বরে
জাগরের দেশে ঘুম, নির্ণিমেষ, পুনরায় লাল সূর্য ঘাসে ঘাসে তির্যক রোদের
দীর্ঘ ফসলের মাঠ, প্রার্থনায় কবিতা কবিতা বলে নাড়িছেঁড়া সহোদর ডাকে।

ক্যামেরা
এঁকে দাও গূঢ় কিছু প্ররোচনা, সিঞ্চিত তুলির প্রীতি ক্যানভাস জুড়ে
পাখিদের উড্ডয়ন, নির্জন উদ্যান, অনাবিল, আঙুলের সঞ্জীবনী ফুলে ফুলে
বেঁধে রাখা সুঁইয়ের মগ্নতা, আহত নীলে চন্দ্রের উপমা কুয়াশার নিধুবনে।

তোমার তীক্ষ্নতা, ক্যামেরায় যতদূর যায় চোখ তারো বেশি দেখে ফেলে ধুধুরেখা
লালটিপ, সূর্যরশ্মি কপালের, আবেদিত কয়েকটি কাঁচের বোতাম, প্রদর্শনী
ছড়ানো-ছিটানো যত দর্জির ক্ষিপ্রতা, চিত্রভাষা, সুঁচলিপি, জিগিষার মর্মমূলে।

মন্দির
আদিমঠ ওই তো শঙ্খের ধ্বনি জলায় মীনের ঝাঁপ দেখ পাখিগুলা উড়ে যায়
দূর কোনো পল্লিতে মন্দির, মাটির দীক্ষিতা করে, নিরন্তর, পূজাটুজা আসে তাতে
উঁচু তার শিরদাঁড়া, মর্মান্তিক! শতাব্দির এই ঘণ্টা, জাগরূক, মুনিয়ার দেশে।

শীতল আবহ ঘেরা প্রতিবেশ, ঝিঁঝিঁরব, নতনমো সহিসের অর্চনা ধর্মের
পাখি এক উড়ন্ত মনীষা, উড়ে উড়ে দূরে দূরে, মহানীল, ঘুরে ফিরে অজানায়
উড্ডিন কার্নিশে তার উড়ো-অভিধান দেশ-বিদেশের ভাষা-পথিকের বিবরণ।

মোরগ
ঘুমভাঙা ভোরে লাল ছিটা মোরগের ডাক, খোঁড়ারোদে পিতা-পুত্রে জুটি
সকাল মাথায় করে উদভ্রান্ত, চলমান, যাপিত জীবন, স্থানভেদ স্বরূপের
ছুটেছে গঞ্জের দিকে প্রত্যুষ মোকামে তারা, তড়িঘড়ি, ফেরি করা আনাজ-বণিক।

শনের চালের নিচে মা আর মেয়েটি, টুকিটাকি স্বপ্নেরত, আগামীর চেতনায়
অচেনা পথের বিধি, কুশলাদি, পিঠাপুলি, প্রতিদিন ট্রেনের আকাক্সা...
এই গল্প বলেছ প্রকাশ্যে, হাটে, বাজারের ভিড়ে, শিরোনামহীন দিনলিপিহীন।

উপমা
কিভাবে আঁকবো এই ইন্দ্রিয়বৈকল্য, ধারণার বিধিরূপ, কল্পদেশ–
ভাবনা বিগড়ে যায়, যদি বলো পথিমধ্যে কোনো বুড়োবট, প্রবাহিত নদীস্রোত
ওড়ে চলা গাঙচিল, সমাহিত সবুজ প্রান্তর, একটানে এঁকে দিতে পারি তাও।

ও সাঁই তোমার দরবারে যোদ্ধাহত প্রাণপণ, নতমুখ, ব্যাকুলের অভিধায়
আমি সেই বুড়োবট সবুজ মাঠের ধারে, বাস্তুসন্ধ্যা, দাঁড়িয়ে রয়েছি একঠাঁয়
ভাবনা বিগড়ে যায়, হায়! উপমা অঙ্কনরীতি আমার গোচরে নাই।

কবিতা
যৌথবিদ এগিয়ে চলেছে সঞ্চারণে, লক্ষভেদী প্ররোচনা, বড় ভয় সমাবেশে–
কিরূপে সম্ভব আজ বিনীত এ দাসে, মনরূপ সম্প্রদান, সংসারের মনীষায়
দাহরূপ পাঠ্য, দিকে দিকে, ফলে সামান্যেই ভেঙে পড়া ভয় কঠিনেও।

সংসারজ্ঞানে নদীরই রয়েছে কেবল সূক্ষ নির্দেশনা, পারাপার মাঝির নৌকোয়
কারুভাব গন্তব্যের রীতি, যোজনের, তুমি দেখছো না মূল প্রযোজনা চিত্রালীর–
অচল ক্রীড়ায় তারা দুইতীর ভেঙে বলে, অভিঘাত, তোমাদের দিয়েছি কর্ষণে।

বিড়াল
দুধের অতিথি, একদিন নেমে আসে চুপি চুপি বন ছেড়ে, মাংসভুক মদিরায়
গেরস্ত ঘরের দাওয়ায়-রান্নাঘরে, শ্বেতশুভ্র আনাজের চরাচরে ভীরু, ভগ্নাংশদ্যোতনা
ঘ্রাণের ইন্দ্রিয় তার, কঠিন বাৎসল্যাতিথি, দৃষ্টিচোর, গৃহে গৃহে দারুণ মার্জার।

দেখ আজ, উপদ্রুত, মুষিকের অন্বেষায় দিশেহারা গৃহকোণে, সরণিতে ফ্যাউ
দুধে-মুষিকের ধর্মে বসে না তোমার মন, অসহিস, সময়ের বিরূপ বিদিশা
পূর্বাপর নিচ্ছো না বাৎসল্য সন্তানের, বেপরোয়া, বিবসনা, দুদিকেই ছুটেছে সে।

শিকার
কলাই অধিক শ্রেয়, চারুকলা পাঠশেষে, দ্বিধামুখ, জানালে সংহিতা গম্ভীরায়
দেখ বেড়ে যায় অভিনয়-জ্ঞান, জনে জনে কথাগুচ্ছ, মতান্তর, পথে-বিবরণে
কলাকে ফলাও করে জানিয়েছ, ভারি হয়ে যাচ্ছে, ঝুকে যাচ্ছে সহস্রাব্ধ।

তুমি হিত-কারুকার, আত্মমগ্ন, খেয়াল করনি প্রাণাধিক সোচ্চারণ...
পাতাদের জীবনী পড়েছ? কি হেতু ঝরেছে বিষ? কান্নারূপ, ভূগোলের অভিপ্সায়
পুনরায় বলি পড়ো, বৃক্ষের রচনা, কারুণ্যের, দেখ, মরে গিয়ে গাছকে বাঁচালো।

কপাট
আলিবাবা আর তার চল্লিশ চোরের গল্প শিশুভোলানোর মর্ম আমাদের দেশে
গল্প জুড়ে মণি-মাণিক্যের প্ররোচনা নৃপতির, হরণের অভিপ্রায় দিকে দিকে
দরজার ওপারে ঘুমন্ত ডাকুদল, অসখা রাজন্যযোগী, গৃহত্যাগী বনছায়।

প্রবেশিকা শেষে হলো কত সম্পর্ক রচনা, নির্বিরোধ, মানুষে মানুষে–
একধাপ, দুইধাপ, তিনধাপ তারপর চূড়ান্ত আকাশ তারাদের, চিরসখা অসীমের
দরজা খুলেই দেখা যাবে স্বপ্নপুরী, কর্মশালা, ব্যাপ্ত-চরাচর গুপ্ত-পৃথিবীর।

আয়না
মুখোমুখি প্রার্থনারত দুজন, উদ্বিগ্ন-ব্যাকুল চোখে প্রকাশনা, ভাষার পর্মর
মাঝখানে সূর্যরশ্মি ঢুকে পড়ে আড়াআড়ি, দিবসের শেষে রঙধনু আকাশের
নদীতীরঘেঁষা দুজনের গল্প তীরে-জলে জলকেলীরত পুরনোর ক্বাসিদায়।

চিত্রকল্পে পথের মানুষ, উড়োপাখি, দ্রুতযান গন্তব্যের, বিপরীতে কোলাহল
বিদ্যুতের তারে বসা দুটি পাখি, অবিরাম গেয়ে চলা বসন্ত-সংগীতে...
আয়নায় মুখোমুখি দেখে ব্যাকুলতা বাড়ে, হাসাহাসি, লোকে লোকে প্রেমের সম্পর্কে।

কফিন
মাথা কই মৃতদের দেশে? ধ্যানমগ্ন ঘুটেকুড়ো, বসে আছে সাধু এক তেমাথায়
ভয়ে বলি, কেগো তুমি বাবা, এইখানে, অন্ধকারে, সংখ্যাগুরু ফসিলের
কেটে ফেলা দুটি গাছ, পড়ে থাকা দ্বিধাজড়, মৃতদের, মুখোমুখি কামকেলী করে।

প্রজ্ঞাপণ, বিশেষত মানুষেরা এরকমই হয়, স্তব্ধরাতে গুঞ্জরিয়া সভ্যতার
কামভোগ দেবতা-দেবীতে, মৃদু ফিসফাস, বিসর্পিল বাতাসের কবরপাড়ায়
কামের সময় মাথা থাকে না, থাকে না মনীষার চিত্রকলা, দশচোখ সুদাসের।

সংসার
বলেছ বিবর্ণরূপ! স্পর্শমাত্র সরে যায়, জলের চিত্রণ-কলা দুরূহ-কঠিন–
ঘাটাঘাট দেহমাত্র স্তরে স্তরে, খাতায় আঁচড়ে চিতা কিংবা ডোরাকাটা আঁকিবুকি
তোমার শাদার ক্যানভাস তাতে জলের সিঞ্চনে তুলি তার দীর্ঘটান, চক্রঘোর।

কিংবা ফোঁটা ফোঁটা লালে মেনেই নিলাম প্রণয়ের স্বর্ণচোরা, জলে, যুদ্ধরত মীন
এ্যাকুরিয়াম বিদ্যায় মগ্নপ্রাণ কোটরের, তেলে-জলে সাজিয়েছ মীনের সংসার
তবু জল কুয়াশা-বিদিত, আর তার নিচে, দিয়েছ স্বার, মীনরাজা অঙ্কনের।

রুমাল
পাতায় দিয়েছি হিয়া রাখিয়ো বান্ধিয়া, চিরকাল, সযতনে কোটরের গূঢ় বিনোদিনী
এই লেখা পড়েছিল পথ-পাশে, খড়োস্তুপ, পাতাদের বেদনায়, আহত রুমালে
মোটেও বলিনি পাতা নিষ্প্রাণ-নির্জীব, ঝরে-মরে পড়ে থাকে প্রতিদিন।

বরং গিয়েছ তুমি পাশ কেটে অভিষ্ট গন্তব্যে, রুমালে ঝগড়া হয় এই বলে–
পাতাদের ছেড়ে দেয়া পথে, যথাকালে, যাত্রাশেষে বিবরণ, অহিংসা অধিক শ্রেয়
উপরে দেখেছো? নতমুখ, শূণ্যডাল, প্রার্থনারত ধরিত্রী নড়ে ওঠে দীর্ঘশ্বাসে।

নজর
তাকালেও পুড়ে যায় গাছ! বাড়ি, শস্যবন, তীর্থপথে ক্ষতদীর্ঘ প্রেমিক-হৃদয়
প্রমত্ত পণ্ঢর, দেখ পরিস্থিতি, কিরূপ তরাসে কাঁপে! কুম্ভজলে বিঠোবা রমণী
মহাজাগতিক লাস্য-তামাশা, চন্দ্রিকাজট, পৌর্ণমাসী গোমেজের অসহ্য জ্যোৎস্নায়।

তাকালে বিষের রূপ ফলে, দ্রাক্ষা-অন্বেষায় পুড়ে গেল গন্দম-কাহিনী
নিষিদ্ধ পথেই শেষে পা-বাড়ালে লালসায়, ফললাভে রূপারোপ মানব-কল্লোলে
ভয়াল ত্রিংশের কোলে বর্ণসূত্র, জলগৃহে স্ত্রস্ত, ডুবো-পাহাড়ের বিপণ্ন স্বদেশ।

আগুন
স্বচ্ছ আর গভীর সমুদ্র-দেশে বিরুদ্ধ আবহে ঘোরাফেরা করে একদল মীন
জল-বুঝে তারা মনযোগী জলে, ক্রীড়নক, গতিমুখ সাঁতারের, পাঁকের রেখায়
তিমির লেজেয় দিয়ে ভর, বেদেনীর জলযাত্রা, নিরুদ্দেশ ভাসানের, তরঙ্গায়।

জলক্রীড়া শেষে অগ্নি-উপাসনা, নড়বড়ে আকুলতা, ভয়ানক মীন-শিকারির
গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়েছে ক্রোধ, দুটি সাপ জলে, এলোমেলো মূর্ছনায়
লেজ ধরে টানাটানি, এখন ভয়ের ডিঙি ঢেউয়ে কাঁপা, তীরমুখি, আগুন পূজায়।

ঘটনা
ফাঁপা অণ্ড, গোলগাল, উপগত উষ্ণীষে মনীষা ব্যথাতুর, অন্বেষায়
তুড়ি দাও এইখানে, বিষে বিষে নীল হয় আমার বৈষম্য, বর্ণচ্ছটা
ফেনাভর্তি ঘূর্ণিচোখ, লাল মনীষার, তুমি গিলে নিলে নির্দ্বিধায়, বিষের ঢেকুর।

ব্যথা পেলে চোখ থেকে পানিও তো পড়ে, একা একা জোছনায়, সমীরণে
আর দেখ ঘটনা কী মর্মান্তিক! নীলের দ্রবণে বাড়ে গ্লাসের সৌন্দর্য টেবিলের
দেশে দেশে চুমুকের প্রণোদনা, দিনে দিনে তোমরাই ছড়িয়ে দিয়েছ।

ধনুক
আকাশ ঝুলন্ত ওই তারাদের মাঠ, উড়িয়েছ ডোলঘুড়ি ঊর্ধ্বস্বপ্নচারী
ধনুকের ডাকে চরাচর কাঁপে, হে করুণ অধ্যাপক, কেন ছিলায় দিয়েছ টান?
বার্তা পাচ্ছি নিখিলের, আকাশ-বাতাসে গৃহায়ণ, সম্ভাবনা ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু এ কি কাণ্ড, শেষে, দড়ি ছিঁড়ে ঘুড়িই পালালো, পথচারী হাসে
চিন্তারত নির্দেশক, এই দৃশ্যে গ্রামীণ আবহ নাই, কুপি বাতি নাই
বিশাল ক্যানভাস খুলে, মঞ্চ থেকে নির্বাসিত কয়জন বিষণ্ন বদনে।

পালকি
পাশে ছিল পাখিদের প্রজা, সুপ্ত, উহ্য, খাদ্যঘ্রাণে তারা আনন্দ শিকারি
ভুবন জয়ের কোনো বাহিত দর্শনে নয় শব্দের সন্ত্রাসে আগমনী, মেঠোপথে
নবমুখ বধূটির চন্দ্রায়নে মাটিবর্তী, গ্রামদেশ কাঁপিয়ে চলেছে উচ্ছ্বাসায়।

একমুঠো ধান, তাতে গোলাভর্তি ধানের ব্যঞ্জনা, কূটচাল ননদীর, বরণের
ব্যাপৃত পাখির গান, নদীতীরে এইসব সামান্য ঘটনা, দেখ প্রতীতি-হরণ
সোয়ারি ভ্রুক্ষেপহীন, ধানের ঘটনাসহ ছুটেছে দিকপাল রাজ্যমোহে।

মিঠাই
ভাষা নিয়ে পুনরায় দুর্বলতা আর রূপকল্প সেও একটা বিষয় আদতেই
তোমাদের পুঁথির প্রভাব জনে জনে, মিত্রজ্ঞান রসিকের, ভোজনের কালে কথা
ঋদ্ধ পাঠশালা, যথা, বসেন্ত কুটুম! কিছু বচন করেন সুবচন বিস্তরেণ।

আখরসে তৈরি হচ্ছে গুড়, চিনিকলে উল্লাসে পিঁপড়েদল, পূর্বাপর রচনায়
ভারি হচ্ছে কাহিনীর খাতা, কালো কালো মানুষের নিবেদিত স্তুতিগান
গোঁপীচন্দ্র, কান্তজি রামমন্দির, কৃষ্ণদিঘি পাঠশেষে বসে আছো একা, নদীতীরে।

পুকুর
কুয়াশা রাতের কথা, এক লিঙ্গরূপ, অন্য আর লিঙ্গরূপে তিরতির কাঁপছে
এইদৃশ্য দেখে যায় একজন, জড়োসড়ো, কাছাকাছি বেতবন জোনাক-আলোয়
মীনপূজা, মীনেদের দেশে গভীরে জলের; তার ঢেউ পাড়ে এসে লাগে।

সহসা জলের ঘূর্ণি, খলবল পুকুরের, আঁতিপাঁতি, তেঁতুলের বনে ব্যস্ত যারা
হাস্যরত, চাঁদ বুঝি ভেসে যায় মধ্যচন্দ্রিমায়, পরীদের ডানা ধরে, বাতাসের
জলে, অন্য এক মূর্তমান কলা, ভাসমান ঝিকিমিকি, প্রণতীর গূঢ় কপিলায়।

ঝিনুক
যেন কোকিলের ভাষা স্বাভাবিক সাবলিল, ফুটে ওঠা রেখায় রেখায়
ভূতাবহ প্রতিবেশী আসে, বলে, দেখেছেন দেখেছেন সুন্দর বসন্ত ফুটিতেছে
কী ভীষণ মগ্ন, ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা? পাতার জীবনী ভেদ করে ফুলেদের দল।

মুক্তাভর্তি ঝিনুকের কাহিনী-বাথান জলাজুড়ে, সমাগত চৈত্রকাল, শুষ্কবন
প্রার্থনায় বসেছে কুড়ানী, চোখে ভাসে মুক্তা, ঝিনুক খোলস, প্যাঁকপ্যাঁক হাসেদের
প্যাগোডা-মন্দির বল বল ঝিনুকেও দাহ দাহিত যে জন জানে ক্ষত-বেদনার।

চারণ
মধ্যরাত্রে উচাটন মফস্বলে রাত-মোহনীয়া, বাজে রাখালের বাঁশি, মধুময়
জোছনা-বাড়িতে পাখিদের ভিড় রাতের গভীরে, ডানবিধি, মজলিসে তর্জমায়
ধ্যানীপাখি-মুনিপাখি পাখির পালকে ছোপ ছোপ বৃষ্টিমাখা, পাখিরা বার্তাবাহক।

নিশিতে, শাব্দিক ঝিঁঝিঁ-পোকা আর নড়ে ওঠা ক্ষণিকের নারকেল পাতায়
যে পালক গিঁথে আছে, তার কাছে সন্ন্যাস চাইবো, ভাবি বিষমের কালে–
চলে যাবো পাখিপাড়া জোছনা-বাড়িতে, পাখিদের ভিড়ে একদিন পাখি হয়ে যাবো।

সালিশ
চুরিরাতে, বেদনার নীলে হা-কপাল! ত্রিমাথার উপমায় শ্রীপ্রকাশ, কেন যাও?
কালোভুশা মুদ্গরের, বসে আছে একজন সহৃদয়, নিয়তি-নির্ভার স্বপ্নদেশে
গৃহকর্তা ঘুমঢুলু, জাপটে ধরে অন্ধকার, বেড়ে, কোমলতা বৃক্ষে ঘুমিয়ে পড়েছে।

পূজোয় দেখিনি তাকে, আসেনি সে সালিশের ভয়ে, জাদুকর, রঙিন খেলনা হাতে
শস্যগন্ধ্যা বিপরীত, তার, সিধুচোরে ভয়; সকালেই বিবরণ, কথায়-লোকের
খোয়া যাওয়া নারকেল-গাছের, হলুদের বন টুকিটাকি আরকিছু শস্যগোলা তামাটের।

মাদুলি
সজিনার ডাঁটা আর সিঁদেল-বেগুন, আলো ব্যঞ্জনার ছড়াছড়ি জলের ভাসানে
সন্ধ্যার আলোয় দীপ, ভাটি-আঘাটায় জলের ত্রস্ততাসহ মধুকর, সপ্তডিঙা
মাদুলি, মোহর আর কামরূপ কামাক্ষার একখণ্ড সাপরূপি-ডালে জলে ভাসা।

সর্প-বিবরের কালে বেদেনীর হাসফাস, দুধের-মাছের স্বপ্নে দিনানুদৈনিক
বেদে-বেদেদের, জোয়ারের কালে সন্তান বুকের দুধে সাপখাবে স্টিলের বাটিতে
ধুনদেশে বেদে-ঠাকুরের অনুষঙ্গ, ভারতমগ্নতা, চলমান, ভেঙেই চলেছে।

খিজির
সাঁতার জানি না বলে জলে ভয়, পূর্ণকলা থমকে থমকে চলে, সামনে বাড়ায়
মননের জলঢোঁড়া তেড়ে আসে, বিদূষক বামনের, মৃতদের সাহস দেখায়
আটকে যায় পা, হাত, কোমরের শরীরের জলকলা, ঘূর্ণমান পাঁকের শ্লাঘায়।

দেখিয়েছ জলের আছর, কেগো? মধ্যপুকুরে শীতল কালাডোর, প্রত্যয় জলের
উদাস বৃষ্টিতে ভিজে আম্রকুটি, গাছে গাছে পাতার ব্যঞ্জনা, মৃদু, নড়ে ওঠে বন
মফস্বলে, চেনাপথে বৃষ্টি যদি চলে আসে? ভরাডুবি হবে, ফেরাও আছর জলে।

তফাত
প্রত্যহ ঘুমের জরা ভাল নয়, খরাকাল, হিতে ঘটমান, মঙ্গলের বিপরীত
কেউ এসে ভাঙাঘুমে ডাকবে, বলবে অকষ্মাৎ, কিরে ডুবে গেলে নাকি একেবারে
ওঠ, জাগ দেখি, ওরা সব পলাতক এসেছিল ঘাটে, ক্রীড়াহত, ভবিতব্য কালে।

আর আমি ঘুম নিয়ে ভাবি কত জাগরিত মহিমা স্বপ্নের, নৃত্যপর বৈনায়ক মথুরায়
তফাতে নেড়েছ হাত? কাকে? ছুঁড়ে ফেলে দেবে নাকি জলে? ঘূর্ণিতে? জঠরে?
যে তুমি তফাত; থাক, কায়াই অধিক মোহ বাড়িয়েছে, বলেছে সে, বিষম প্রকার।

বৈশাখ
মস্ত বৈশাখের তোড়ে বৃষ্টি প্রযোজনা করি শয়নে-স্বপনে স্থিতধির জাগরণে
নিরুপায়! এমনিই চনমনে ব্যাকুল বৈশাখের ভাবনায়, ভীত, কালো-আকাশের
প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা, কদমের গুচ্ছ, পাখালির রীতি আর ঠাকুরের গানে মন।

দরজার কড়িকাঠে দ্বাবিংশের স্বাগত-শুভম, জেগে ওঠে জ্বাতিতত্ত্ব প্রণোদনা
কাক্সাজল, পরাপাঠ পত্রালীর, আমার অর্থনৈতিক ভাবনায় তবু অহেতু সময় যায়
কালাঝড়, তুখোড় বৈশাখে ভিজে নাড়ামোড়া, চিন্তাগুলা মুষড়ে পড়ছে ক্ষেতে-মাঠে।

গ্রহণ
ব্যাখ্যাহীন, না জেনেই আকড়ে ধরেছে মধ্যযাম, কৃষ্ণপক্ষ, বিবমিষা পৃথিবীর
কামাগ্নি-অনল জলে গ্রহণের সদাচার প্রশ্ন হাঁকে রূঢ়, আমাকেই পীড়া দাও?
কেন এই মর্মসার, মূলে, উদরে তরুর রসে মহাত্মন? দ্রুত-পদ, বেলা যায়।

কণ্ঠায় জমেছে মেঘ, থাবা দিয়ে ডেকে নেয় অন্ধকারে, আরূঢ় রৌরব ছেড়ে এসে
ক্রীড়ায় বসেছে মন, ত্রিজগত ফানা ফানা করে পশ্চাতের ব্যবহার–
মগজে বিষের লোল, মহাত্মন? দুর্বিপাকে, ব্যাখ্যাহীন জনান্তিকে বাঘেদের থাবা।

ফোয়ারা
ধান-কালাইয়ের দেশ, পাখালির স্বপ্নায়ন কি লিখবো? ভোরের রঙিন সূর্য আর
নদীর কল্লোলে জাগরিত চেতনার উপমিতি, ফুলে-ফলে আমার দেশের ব্যাপ্তি
রূপকথা শিশুদের কল-কাকলিতে রাঢ়দেব, জাগরের, ঊর্ধ্বে, উঁচিয়ে ধরেছে।

ভোরের সকাশে কাঁপে উত্তোলিত বাংলাদেশ, পতাকার পতপত ধ্বনি বাতাসের
এ সবুজ বন তাকে স্বপ্ন দিয়েছিল একদিন, শিশিরের জলে ভেজা সর্ষেফুলে
আনন্দদিনে, বৃদ্ধের হাত ধরে ফোয়ারায় নিবিড় বাংলার ধারা ঝরে অবিরাম।

No comments:

Post a Comment