Saturday, July 4, 2009

নকশিকাঁথায় কয়েকটি দৃশ্যসুতো / প্রথম পর্ব

ডাক

পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন মহিলা শুধু শুধু হেঁটে যান অতীতের দিকে

তাকে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘগ্রাম, দীর্ঘপথ মহাদেশে; শেষে

বাগানে গাছের কিছু কিছু পাতা এলোমেলো হলো

গ্রামে গ্রামে সে সংবাদ গান হয়ে রটে গেলো, তুলকালাম, বিরুদ্ধ বৈরুতে

সেতু

দুয়েকটি লাইট জ্বলে শহরের ল্যাম্পপোস্টে, রাতের মনীষা

বিপরীতে রেখেছ তোমার মুখ, আড়ালটুকু পার হয়ে আজ

যতদূর গ্রামে আরও গভীরে প্রবেশ করে দেখি, আহা! ভীষণ যমুনা

ম্লান হয়ে যায় দিবসের আলো শীতলতা ঘেরা গৃহে গৃহে

কথা

কথার ভেতরে তুমি বৃথা ঢুকে যাও, দিকভ্রান্ত হই, আর দেখো

দিগ্ভেদে কথার সঙ্গে ইন্দ্রিয়ও আপ্লুত হই সেই ভাবনায়

গ্রামে যাবে বলে ঠিক করছ? হয়তোবা মনে হতে হতে গভীর স্বাপ্নিক...

পল্লবিত নীলিমায়, ধীরে ধীরে শিশিরের স্পর্শে শিহরিত তোমার পা

শাড়ি

শাড়িপরা শিখতে গিয়ে চোখে পড়ে নিরব রয়েছে গ্রাম, গূঢ় কর্নাটক

সাধারণ জীবন-যাপন তবু কি করে গ্রহণ খেলা হয়...

কী করে শীতের কুয়াশার ভেতরেও তেজি উত্তালক, চরণ মঞ্জুষা

বলো দেখি এমন আগুন বাস করে কোনো নির্জন পল্লিতে

কবি

আগুনের গ্রহণ ক্ষমতা জানা ছিল তীব্র, ছাইভষ্ম, লেলিহান

ভরা-শীতে পুড়ছ হাত আগুনের কাছে বসে, শীতের তাড়না

কাছাকাছি শাদাকালো নদী থেকে আজ তুলে নিচ্ছো দেহপাঠ

চরম বিষ্ময়! দেখো আজ তোমার সন্তান ওঠে যাচ্ছে টিকটিকির ঘরে

নদী

চরের বালিতে রাখছো পা, গ্রামগুলি দূরে কুয়াশার মতো

তলদেশ খুঁড়ে পাচ্ছ পচা কাঠ, কয়লার টুকরো, মুদ্রা, মানব-কঙ্কাল

একদিন যেখানে ঢেউ ছিল, মাঝি ছিল, ছিল ভাটিয়ালি...

আজ দগ্ধ বিরাণভূমি, অন্যত্র কোথাও এইসব দৃশ্যায়িত হচ্ছে

বট

চিঠির ভেতরে ভরে পাঠিয়েছ কিছু দৃশ্য; অতি সাধারণ

বিকেল বেলার পরিবেশ, কয়টি ফুলের গাছ, তোমার প্রসন্ন মুখ

বাগানে মালির মগ্ন বিচরণ গাছে গাছে সুগঠিত, সুললিত প্রেম মহিমায়

স্বাক্ষর ছিল না কোনো, বটগাছে ছিল দুটি গানরত কোকিল...

চর

এমন রাত্রিতে দেখি মেয়েটির শাড়ির জমিন জ্যোস্নায়িত

তার ভাঁজে ভাঁজে নকশিকাঁথার ঢেউ, নিবিড় বুনট

হাতের রেখায় নদী ছুটে যায়, মাঝিয়ালি দূরদেশে, দৃশ্য-দৃশ্যান্তর

চোখের মুদ্রায় ফুটে উঠছে বর্ষা বর্ষা খেলা, ভাটিয়ালি রূপ

চাঁদ

নেমেছে গভীর রাতে, তার আলো ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামালয়ে

জ্যোস্নাচ্ছটা, যারা চলে যায় বনে... এভাবে না জেনে

গৃহে ফেরা হয় না সহজে, একদিন টুইন টাওয়ারে গিয়েছিল যারা

তারাই তো জ্যোস্নাদল, না ফেরা বণিক, আদতে জ্যোস্না কী গৃহে ফেরে

ছুরি

ফোঁটা ফোঁটা সিদুঁরে পড়েছে রেখা সীমন্তের ভাঁজে

সবের শেষে, গহ্নালগ্নে; বলেছ ছুরিখেলা, দিনক্ষণ আদিমের...

আমাদের মুখোমুখি ভূগোলতত্ত্বের গ্লানিবোধ, বিশ্লেষিত অভিধান

রক্ত নয় বিষের বাণিজ্যে তুমি বেশি লাভবান

ঘোড়া

ছুটন্ত ঘোড়ার পায়ে পরাচ্ছ ঘুঙুর- তার শব্দে ক্ষীপ্রতায় শতদল

মোহগ্রস্ত ঘোড়া, ছুটে যায় দূরে; প্লাবিত ধুলোয় ওয়েস্টার্ন

চিহ্নিত তোমার ক্যানভাস সন্তরিত, পড়ে থাকে শূন্য, খুঁড়ের সন্ত্রাসে

হারানো তুলির খোঁজে, অবিরাম, তুমিও ছুটেছো শেষে যতিচিহ্নহীন...

ভাষা

যে অর্থে আমাকে দেখি আলোর রচনা লিখে লিখে

ভাষার প্রসঙ্গে তবে বলি, ঢের আছে দুর্বলতা, ক্লান্ত, অভিপ্সু-অন্বেষা

ধরো তুমি বলে যাচ্ছো কথা নিভৃতে নয়তো জন-সমাবেশে

পরদিন আরেকটি ভাষা এসে তোমার সমস্ত কথা কেড়ে নিলো

মূর্তি

নিজের অংকিত মূর্তি দেখে মুগ্ধ তুমি, তার সুডৌল বিন্যাসে

রাখছো চুম্বন আর বাতাসের ঝাপটায় উড়ন্ত চুল দারুণ প্রজ্ঞায়

ভেসে যাচ্ছে, বিবিয়ানা-সাহেবানা পলে পলে ভাসছে তোমার মন

কালরাতে যে স্বপ্নটি দেখেছ ঘুমের ঘোরে, সে এক পাথর উপাখ্যান

নীল

খুব স্বাভাবিক হলে মেনে নেয়া যেতো রূপারোপ প্রতীতির

কতক জলের দাহ, সেও কিনা বিসদৃশ! প্রণোদিত নিরব সন্ত্রাসী

হনন যতটা আছে জন্ম তত নয় এই মতো জানি সত্য

আর তাই মেনে নিয়ে ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছি গাঢ় কুয়াশায়

বাতি

অন্ধ কয়েকটি পাখি ওড়ে যায় কোনো অজানায়, বিপ্রদেশে

ঋতু বদলের কালে এরকমই তারা; বাতিঘর দেখে দেখে

সূর্যের তাপিত পথে অগ্রসরমাণ, তার পিছে কলতান, মোহমায়া

রেখে যাওয়া অন্ধকার নিয়ে, যত যত গবেষণা...

চিঠি

নলখাগড়ার পাশে এলোমেলো কয়েকটি তালের পাতায়

সমাপ্তির ভাষালিপি; তোমাদের গল্পের বিষয়, দৃশ্যমান আরণ্যক-

আর আজ আমাদের কাঁচামাটি-পথে জাগরূক মহিমায়

উড়ে যাচ্ছে কর্ণফুলি এক্সপ্রেস হাওয়ায়... হাওয়ায়...

দেহ

ফুল ভেবে ভুল হয়ে যাওয়া কিছু গরল-মন্থর

কুড়িয়ে পেয়েছি ভোরে, অচেনা বাতাস, তরঙ্গিত, দূরদেশে হাতছানি

বণিকের গৃহে বেড়ে ওঠা তুমি হিসেব রেখেছো ঠিক

আমার তো ঘর ছিল না, ওড়ে আসা শাদা কবুতর...

মুদ্রা

উইপোকা মরেছে আগুন-দাহে শ্মশানে শ্মশানে, কে না জানে

তীব্র দেহী, মৃত্যু থেকে সুখ নেয়া বস্তুগুলি আসলে আগুন

বাজারের দুধ-বেঁচা কিশোরীটি জেনেছে নিয়ম এইরূপ হয়! হয়!

আগুনের শিশু কেহ কিনে নিয়ে ঘরে ফেরে সুখে

তীর

বিঁধেছে এমন! শেষে কূলকিনারা নাই, জনারণ্যে দৃশ্যমান

পেতে রাখো হরিণের জাল আর ডেকে বলো: স্বতশ্চল নির্দেশিকা...

গূঢ়রূপ চন্দ্রকলা, আয়... আয়... তুলে আনি জ্যোস্নার ফুল

দেখো আজ প্রিন্টেড দেয়ালে ঝুলে আছে রাধে আর শ্যাম

টিপ

পাল্টে গেলো রেণুবালা, কপালের ক্ষতটিপ, একটি তারা নয়নাভিরাম

চরণে দুর্লভ অমৃতাষী, জনাকীর্ণে চন্দ্রায়ন ফেলে, একা, সুতনুকা

ডাকছে হাওয়ার গাড়ি, কলমিলতার দেশে সমান্তরাল, দূরের রেলপথ-

তোমাকে সবকথা বলা যাবে না, নূপুরে যার সিংহের গর্জন

চিত্ত

তোমার রন্ধনকলা প্রশংসা মুখর, শাক-আনাজের দেশে

তুলে দিচ্ছো প্রীতির মহিমা পাতে পাতে; প্রেম দিয়ে সব হয়

কেউ না জানুক আমি জানি, আমরা সমষ্টিতে এক

এক, মানে সংখ্যার হিসাবে নয় শ্রুতির নিশানা ঘরে ঘরে

হরি

খোলাখুলি তাকিয়েছি রিক্সার টুংটাং ভেদ করে

আমাকে দেখুক, ডাক দিক হরি বলে প্রীতম কোথা যাস?

দূরে যাচ্ছে প্রাণ আর ক্রমশ পেঁচিয়ে যাচ্ছে সূর্যবুড়ি-সুতা, বাউলুরি

নদী... নদী... চিকারে ডুবিয়ে দিচ্ছে নৌকো, সবদিক কানা করে

মিথ্যে

শতখণ্ডে প্রবাহিত হয়ে গেলো জাগৃতি-মনীষা

সাথে সাথে নিরানব্বই কণ্ঠে উচ্চারিত মন্ত্র, দয়াময় যে

অমৃত-ভাষণ আড়শির, ধরে নাও পুরোটাই মিথ্যে কথা

তবু তুমি সত্য বলে মেনে নিও আমাকে বাঁচাতে

ঝড়

দশদিক-ব্যাপে আসে ফেরানো যায় না একা, ভাবো

সমুদ্রে সে থাকে, ওঠে আসে আলোড়ন তুলে; বাতাসের উড্ডিনছিলায়

দাহপত্রে লিখি এক করুণ পাখির গান, দেখ দেখ উড়িতেছে ওই...

তুমুল ঝড়ের কোপে ভাঙা যার ঘরে আজ অচ্ছুত-আখ্যান

শব্দ

তোমার প্রস্থানদৃশ্যে কোনো ট্রেন থাকে না স্টেশন থাকে না

অন্তহীন এক সুদূরের শব্দতিথি

পাহাড়ি নদীর ঢাল বেয়ে বেয়ে নিরব-ব্যঞ্জনে

একদিন ঢলে পড়লে সবুজের ছায়াঘেরা সন্ধ্যার আসরে

তিনি

একদিন আসবেন... কিছু একটা হয়ে

জানি এর ফল্বেরুবে শুভ

বিলম্ব যাত্রার ট্রেন ফলে আজ বিশ্বাসে লেগেছে কাঁটা

ডোন্ট কেয়ার এনিবডিফেলনা হয়ে ভাসছে আজ ইথারে ইথারে

হাত

কালকের বন্ধুবেলা আজকের গরমভাতের ধোঁয়া

ওড়ে ওড়ে দূরে... নিয়ে যায় সকালের মুগ্ধতা

সকালই ভালো, গতকাল শাসিয়েছিলো

প্রার্থনার সময় সংগীতে সচেতন থাকা ভালো

কোতি

মূলভাবে লজ্জা, ফলে অশ্বডিম্ব ধরে টানাটানি

তুমি যাহা ছুঁড়ে দাও জনান্তিকে

সেটা কোনো গৌণকবি ফেলে গেছে

অপার খননে, করুণা সিন্ধু সে নিজেরই অজান্তে

ঘুম

যা কিছু ভাবি তা কেড়ে নাও

আবার ফিরিয়ে দাও ক্ষণে ক্ষণে, ঘুমে-জাগরণে

তোমাকে চেনার পথ সহজ ছিল না, পারিনি চিনতে

আমি দীনজন, ক্ষমো গুরু, দাসে, হেন অভাজনে...

ভবা

তীর নিয়ে রূপকল্প, দৃশ্যকল্প দেশে দেশে আর পথ-শেষে

এইসব কথামালা জানা হলে থাকা যেত সজ্ঞান-সদনে

ফলত অধমের প্রাণ গোপে গোপে ডাকি আজ

প্রণাম নেবেন কোটি, ডাকবেন নিশ্চিত ভবা রে...

পীড়া

চেয়ারের নেশায় লুটিয়ে যাওয়া পাপেট বালকটি

আমার তৃষ্ণার জল খায় আর

থমকে গিয়ে কুকুরের মাথা খায়

জনে জনে বিবরণে রয়ে গেলো তবু চেয়ার একটি অমিমাংসিত শূন্যতা

দাহ

পূণ্যার্থীর বাসনা ব্যতীত মাঠব্যাপী চারাচর

দিনমান বৃষ্টিকে ডেকেছি, আয় বক্ষে

বৃষ্টি রে! বিখ্যাত ক্ষতে শিলার বাহিত জল ছাড়া

ফসলের সম্ভাবনা দেখেছিস? এই পোড়া দাহনের কালে

পূজা

অদৃশ্য বাতাসে নাড়ো সূচনা-সংগীত, কিংবা নেই

আঁধারে কোথাও এক জ্বলমান প্রদীপের টুই

আমার প্রদীপপূজা শোনো হে সন্ন্যাস-

প্রিয় মন্দিরের, কোনোদিন থেমে থাকবে না

সুর

মিস করেছি অপবাদে, শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছো অভিমান

আর পথে পথে, গ্রাম-ভাটিদেশে, জানিয়ে রেখেছো

পাঠাবে না কোনো দুধচিতইয়ের পিঠা-মুখরতা

আমি করি সুরের বন্দনা, ভুলে যেতে পারো কিনা দেখ এবার বাঁশির বিবরণ

খেলা

যথারীতি সনাতন, তুমি নয় আমি নয় কালে কালে লোক-সমাবেশে

প্রচারিত হয়ে গেলো ভাবের প্রসাদ যত, ভুলের বেসাতি

রাঢ়বঙ্গ, সমতট, হরিয়াল, লালমাই, আড়িয়াল খাঁ মাইল মাইলব্যাপে

ধানের খেলায় মাতে সবুজ আমার মন তুমি তার মর্মার্থ ধরোনি

জট

চন্দ্রায়ন লেখা হলো এবার বানাও দেখি আরেক মার্জার

চাটখিলা পরিয়েও শান্তি নেই ফলের নেশায় দিনমান

আমার ঔদাস্যে দেখো তালাবদ্ধ হলো আজ ফলের সংগ্রহশালা কিন্তু

শিশুবোধে খোলে না মাথার চাটখিলা-জট, তুমি খুলে দিও

যদু

দিন শেষ, রুক্ষ-সুক্ষ ভাব গায়ে মেখে তুমি খোঁজে সম্পর্কের ইতিউতি লেখকের

ওই যে বেটা হাবাচোদা ভাবসাব গড়িয়ে চলেছে, তাকে কেনো দেখাও ক্রীড়ার ফল

শতাব্দির স্রোতে ভাসিয়ে গা যত কর মনস্কাম, নবীনবরণ, লেখা-অলেখার

ঘাসে ঘাসে ছড়িয়েছে সেইসব রঙের আমিষ, চির-হরিতের, শাল-সেগুনের

মায়া

ঘর এক ইন্দ্রজাল; ইট, কাঠ, বালি, সুরকি, সিমেন্টে-লোহায় আসবাব

বেডরুম, টয়লেট, কিচেন, বারান্দা, ছাদ, মায়ার মুরতি, বাড়িতে মা থাকবেন

ক্লান্ত তুমি বাড়ি ফিরবে, হাতে-পায়ে, চোখে-মুখে পানির ঝাপটা তারপর

বাতাসের সমুদ্র-আবহে বিছানায়, পাখিদের গৃহায়নে এসব প্রযোজ্য কিনা তা জানি না

ট্রেন

যন্ত্রেরও মন্ত্রণা আছে, দেশলাইয়ের শূন্য বাক্সে

তার গেঁথে দিয়ে কথা বলো কানে কানে, শব্দ পাবে

শামুকে দিয়ে ফুঁ যদি চাও সমুদ্রের শো শো, পাবে তাও

আমার মন্ত্রণা যন্ত্রে নয়, সৃষ্টি স্রষ্টায়, আদতে থাকে না কোনো স্মৃতি

দৃশ্য

বদলেছে, প্রেক্ষাপট ভিন্ন, পারবে না, তোমার ক্যামেরা-ভর্তি

গম-সরষের ক্ষেত, পথপাশে হলুদ পত্রালী, দিঘি জুড়ে-

লাল শাপলার দল, নুয়ে পড়া শিমুলের ডালে-বসা দুটি মাছরাঙা

প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তুমি পারবে না, বদলেছে আম-কুড়াবার জাম-কুড়াবার কাল

ধান

সবকিছু শ্রবণে আসে না, বাবা বাবা বলে দিয়েছো চিকার

ফিরে আসে দেয়ালের প্রতিধ্বনি হয়ে, সামনে বিস্তর মাঠ

ধানের দোলায় মৃদু নদীর তরঙ্গ, ঝিঁঝিঁদের গান হয়

কি লিখবো? গন্ধে গন্ধে কৃষকেরা চারিদিকে হয়েছে মাতাল

গামা

অধিক পোড়ানো ইট ঝামা হয়ে পড়ে থাকে খলায় খলায়, একদা এসব ঝামা

মায়েরা সংগ্রহ করে পায়ের গোড়ালি পরিষ্কারে ব্যবহার করতেন

ইট পুড়ে ঝামা হয়, হৃদয় পোড়ালে? তবে গামা, আমি গামা-

মায়েদের... বোনেদের... আমার কণ্ঠের ধ্বনিগুলা সব রামা...

জ্ঞান

যথেচ্ছ হয়েছে অপলাপ কীর্তি-অকীর্তির সুধা মাধুকরি

চাইছো না মানতে সম্পর্কের ইতিউতি- শব্দ পাচ্ছি ট্রেনের, ইথারে

মনীষা-বিহার যত পড়ে থাকে ছাদে ছাদে, ভেদ-অভেদের

কিছুই থাকে না আগেপরে, থাকে না সম্যকজ্ঞান, ধর্মের

গতি

চারুকলায়, তরুণ-তরুণীগণ পাতাপ্লেটে মধ্যাহ্ন খাবার খাচ্ছে

একে-অপরের দিকে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে আর পাশে, ড্রেনে পড়ে থাকা

গাছের পাতারা, চলন্ত গাড়ির গতি গুনতে গুনতে-

হাতে রাখা চামচ সিলোফেন পেপারের রহস্যের দিকে উড়ে যাচ্ছে

দল

এই যে তীব্রতা শীতে, চাঁদের জোছনা, উপচে পড়েছে আলো হিমালয়ে

মাথার উপরে চাঁদ চলে যাচ্ছে অন্যগ্রহে ফলে রাত্রিদেখাদল নীড়ছাড়াপাখি

রোদ্দুরের জন্যে বসে থাকে? বৃক্ষগুলি এরকমই পাতা ছাড়ে? ঝরে পড়ে?

সূর্যের ওপিঠে সূর্য চাঁদের ওপিঠে চাঁদ দুপিঠেই হয়ত বেড়েছে দুটি কোনো প্রাণ

বোলা

বোলা এক বিষো, বড়মাছি, দেখ হলুদ ক্ষীপ্রতা, উচাটন ভনভন

আত্মহন্তারক-বিষো মৃত্যু হাতে উড়ে উড়ে দগ্ধতা রচেছে

কামড়ে দেয়, স্বভাবসুলভ কুশলতা, কালজ্ঞানকাণ্ড কিছুই লাগে না

হুলফোটামাত্র লীন, দুধের বেদান্ত তার বোলায়-শরীরে ছোট ছোট বেদনায়

সোনা

বীজের রহস্য মানি ধানে-গমে মিলেমিশে কৃষির প্রসারে মন

নড়ে না কোথাও, অকটেন নয় ম্যাঙ্গানিজ নয় মাটিতেই কেবল

রয়ে গেছে অধিক রহস্য, গুচ্ছ গুচ্ছ বীজের বিস্ফার, শস্যের মহিমা

জলোচ্ছাস আর বানে ভয় ওই ডাকুস্রোত ভেঙে দেয় সকল রহস্য

কায়া

আহা রে উন্মুখ! নত হতে হতে করেছ সুখের বাসায়ন

কায়া? কোনো দাহ্যবস্তু, বক্রাকার, স্ফীত, স্থূলাকার নাকি তাম্রকঠিনের রূপ

ছিদ্র দিয়ে দেখা যায়, রিক্সার টুংটাং দুয়ারে দাঁড়িয়ে হীনপ্রার্থী-

কায়া? সে তোমার মন, জায়মান বেঁধে রাখি কোটরাগত দুর্লভ লাভা

লক্ষ

বিছিয়ে দিয়েছি, গুঁড়ি গুঁড়ি সমতাল দেশে-প্রদেশের গুহা, গৃহাভ্যন্তরে

পথে নেমে চলেছ অনতিদূর? উড়ে উড়ে বাতাসের হাড়ে দিয়ে ভর, যন্ত্রযানে-

সেও পড়ে যেতে পারে চিপটাং কিংবা ধূলিস্যাত, পথে? ফুলও তো দিয়েছি

উল্কা

স্বর্গফল! পড়েছে ভূ-পৃষ্ঠে বিরাম চিহ্নের রূপ নিম্নগামী

দ্বিতীয়ার শ্রেষ্ঠ পতনের মতো ফ্যাউ, ক্ষ্যাপা, ক্ষত্রিয়রূপতা-

ধরা যাবে ভাবি, সেকি! কুপোকাত, ভস্মিভূত হাওয়ায় অঙ্গার

জলোচ্ছাসে, প্রবল ঢেউয়ে আচমকা, দৈবাত চমকে দিয়ে উল্কা এক স্বর্গফল

বৈরি

এরূপ না হওয়া ভালো, পথে দেখা অজানা-অচেনা কেউ জিজ্ঞাসিত স্বামী

গুরুজি কোথায় চলেন? তারপর নদী এসে ঢুকে গেলো চিন্তায়-মজ্জায়

দুইতীরে বসবাস, একতারে টানাটানি খেলা, খেলিছ বিশ্বলয়ে-

অহমের মাড়িয়ে পায়ের ধুলো শিল্পহীন নিদ্রাহীন ক্লান্ত প্রেমিকের...


চোখ

গভীরে নিজেই অন্ধ, ঋষিরূপ! সুক্ষতা পরখ করা যেতে পারে ভেবে

চড়ে বসি ভূগোলের মানচিত্রে, মহাসময়ের সুরংপাথার, তাতে দেখি শিশুবোধ, কায়া-

যাত্রাযজ্ঞে ফুলে-ফেঁপে রেখা দীর্ঘ হয়ে যায়, প্রস্থ বেড়ে যায়

রেখার সুক্ষতা দেখে আঁকাবাঁকা মন দেশে দেশে ছুটে যায়

No comments:

Post a Comment